কার্য (Work):
সাধারণত কাজ বলতে আমরা এমন কিছু বুঝি যা করলে আমরা দৈহিক ক্লান্তি অনুভব করি । পথ চলা, কথা বলা, হাতল চেপে নলকূপ থেকে জল তোলা, সাইকেল চালিয়ে স্কুল যাওয়া, জমি চাষ করা, নৌকায় দাঁড় টানা প্রভৃতিকে আমরা কাজ বলি । দৈনন্দিন জীবনে এমন নানা রকমের কাজের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে । তাই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কাজ কথাটির নির্দিষ্ট কোন সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয় ।
বিজ্ঞানে কাজ একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয় । কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে তবে বিজ্ঞানের ভাষায় প্রযুক্ত বল কাজ করেছে বলে ধরা হয় । কিন্তু বল প্রয়োগ করা সত্ত্বেও যদি বস্তুর সরণ না ঘটে তবে প্রযুক্ত বল কাজ করেছে একথা বলা যাবে না ।
মনে কর, তুমি ঘরের মেঝে থেকে একটি বইকে টেবিলের উপর তুলে রাখলে । এখানে বইটির উপর প্রযুক্ত বল বইটির সরণ ঘটিয়েছে বলে কার্য করা হল । কিন্তু এক ব্যক্তি অনেকক্ষণ ধরে একটি ভারী পাথরের উপর বল প্রয়োগ করেও পাথরটির স্থির অবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারল না । এখানে পাথরটির সরণ না হওয়ায়, ঐ ব্যক্তি পরিশ্রান্ত হওয়া সত্বেও কোন কার্য হবে না ।
কার্যের সংজ্ঞা: কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ঘটে তবে বলা হবে যে, প্রযুক্ত বল কার্য করেছে ।
কার্যের পরিমাপ (Measurement of work):
বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং ঐ বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণের গুণফল দ্বারা কার্যের পরিমাপ করা হয় ।


মনে করি, কোন বস্তুর উপর F বল ক্রিয়া করায় বলের প্রয়োগ বিন্দু A থেকে B-তে সরে গেল । যদি AB = S হয়, তবে
কৃতকার্য = প্রযুক্ত বল x বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ
W = F . S
কিন্তু, F বল অনুভূমিক তলের সঙ্গে θ কোণ করে কোন বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল হলে যদি অনুভূমির তলে বস্তুটির সরণ S হয়, তবে কৃতকার্য W = FScosθ
বল ও সরণ উভয়েই ভেক্টর রাশি । কিন্তু কার্য একটি স্কেলার রাশি । অর্থাৎ দুটি ভেক্টর রাশির গুণফল একটি স্কেলার রাশি হতে পারে ।
কার্যের একক (Units of work):
- কার্যের পরম একক (Absoulute units)
(a) C.G.S. পদ্ধতিতে কার্যের বড় একক আর্গ (erg) । কোন বস্তুর উপর এক ডাইন বল প্রয়োগ করলে যদি বলের ক্রিয়ারেখার অভিমুখে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ এক সেন্টিমিটার হয়, তবে কৃতকার্যের পরিমাণকে এক আর্গ বলে ।
অর্থাৎ 1 আর্গ = 1 ডাইন x 1 সেন্টিমিটার = 1 ডাইন-সেমি ।
(b) S.I. পদ্ধতিতে কার্যের একক জুল (Joule) । কোন বস্তুর উপর এক নিউটন বল প্রয়োগ করলে যদি বলের ক্রিয়ারেখার অভিমুখে বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ এক মিটার হয়, তবে কৃতকার্যের পরিমাণকে এক জুল বলে ।
1 জুল = 1 নিউটন x 1 মিটার = 105 ডাইন x 102 সেমি = 107 আর্গ
- কার্যের অভিকর্ষীয় একক (Gravitational units)
(a) C.G.S. কার্যের অভিকর্ষ একক গ্রাম- সেন্টিমিটার । এক গ্রাম ভর বিশিষ্ট কোন বস্তুকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে এক সেন্টিমিটার উপরে তুলতে যে কার্য করতে হয়, তাকে এক গ্রাম সেন্টিমিটার বলে ।
1 গ্রাম-সেন্টিমিটার = 1 গ্রাম ভার x 1 সেন্টিমিটার = 981 নিউটন x 1 সেন্টিমিটার = 981 আর্গ ।
(b) S.I. পদ্ধতিতে কার্যের অভিকর্ষীয় একক কিলোগ্রাম-মিটার (kg-m) । এক কিলোগ্রাম ভর বিশিষ্ট কোন বস্তুকে অভিকর্ষের বিরুদ্ধে এক মিটার উপরে তুলতে যে কার্য করতে হয়, তাকে এক কিলোগ্রাম-মিটার বলে ।
1 কিলোগ্রাম-মিটার = 1 কিলোগ্রাম ভার x 1 মিটার = 9.81 নিউটন x 1 মিটার = 9.81 জুল ।
কার্যের ব্যবহারিক একক: কার্যের ব্যবহারিক একক হল জুল ।
কার্যের প্রকারভেদ: বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণের অভিমুখ অনুসারে কার্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা : (I) বলের দ্বারা কার্য এবং (II) বলের বিরুদ্ধে কার্য ।
(I) বলের দ্বারা কার্য: কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ বলের ক্রিয়ার অভিমুখে ঘটে তবে বলা হয় যে, প্রযুক্ত বল দ্বারা কার্য করা হয়েছে ।
যেমন – কোন বস্তুকে উপর থেকে ফেলে দিলে বস্তুটি অভিকর্ষ বলের টানে পৃথিবী পৃষ্ঠে এসে পড়ে । এখানে বস্তুটির উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষ বল নিম্নমুখী এবং বস্তুর সরণও একই দিকে ঘটে ।অর্থাৎ এখানে অভিকর্ষ বল দ্বারা কার্য করা হয়েছে ।
(II) বলের বিরুদ্ধে কার্য: কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে যদি বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ বলের ক্রিয়ার অভিমুখের বিপরীত দিকে ঘটে তবে বলা হয় যে, প্রযুক্ত বলের বিরুদ্ধে কার্য করা হয়েছে ।
যেমন – যখন কোন বস্তুকে পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে উপরে তোলা হয় তখন অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কার্য করতে হয় । একটি বইকে মেঝে থেকে তুলে টেবিলের উপর রাখা হল । এক্ষেত্রে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কার্য করা হল ।
কার্যহীন বল (Workless force):
বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলেই কার্য হবে এমন কথা বলা যায় না ।
(I) কারণ আমরা জানি কৃতকার্য = প্রযুক্ত বল x সরণ বা W = F x S
এখন যদি কোন বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করা সত্ত্বেও বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ না ঘটে অর্থাৎ সরণ S = 0 হলে কৃতকার্য (W) = F x 0 = 0 হবে ।
(II) আবার বস্তুর স্মরণ এর অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে (90°) ক্রিয়াশীল বলের দ্বারা কোন কাজ হয় না । কারণ কৃতকার্য W = FScosθ = FScos90° = FSx0 = 0
কার্যহীন বলের সংজ্ঞা হিসেবে বলা যেতে পারে যে, প্রযুক্ত বলের ক্রিয়ায় যদি বস্তুর সরণ না হয় অথবা বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল এবং বস্তুর সরণের অভিমুখ পরস্পর সমকোণে থাকলে সেই বল দ্বারা কোন কার্য হয় না । এই ধরনের বলকে কার্যহীন বল বলে ।


উদাহরণ:
(i) একটি বালক কোন বৃত্তাকার পথে নির্দিষ্ট স্থান থেকে ছুটতে শুরু করে আবার আগের স্থানে ফিরে এল । ফলে বালকটির মোট সরণ শূন্য হল । ক্ষেত্রে বালকটির দ্বারা কৃতকার্য = 0 ।
(ii) দড়ি টানাটানির খেলায় উভয়পক্ষ সমান জোরে দড়ি টানলে দড়ির কোন সরণ ঘটে না । ফলে দড়ির উপর প্রযুক্ত বল কোন কার্য করে না ।
(iii) মনে কর, কোন এক ব্যক্তি এক বালতি জল হাতে ধরে দাঁড়িয়ে আছে । এই অবস্থায় সে বালটির উপর বল প্রয়োগ করছে বটে, কিন্তু বালতিটির সরণ না ঘটায় প্রযুক্ত বল দ্বারা কোন কার্য হয় না ।
(iv) মনে কর, এক ব্যক্তি একটি ভারী সুটকেস সাথে ঝুলিয়ে ভূমির সমান্তরাল বা অনুভূমির তলে হেঁটে চলেছে । ফলে সুটকেসটির সরণ অনুভূমির তল বরাবর ঘটবে এবং সুটকেসটির উপর ক্রিয়াশীল অভিকর্ষ বল সুটকেসের সরণের অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে ক্রিয়া করবে । এখানে সুটকেসের সরণের অভিমুখ ও অভিকর্ষ বলের অভিমুখ পরস্পর লম্ব থাকায় অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কোন কার্য হয় না ।
(v) বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণায়মান কোন বস্তুর উপর যে অভিকেন্দ্র বল ক্রিয়া করে, তা বস্তুটির গতির অভিমুখের সঙ্গে সমকোণে থাকে । ফলে ওই বল কোন কার্য করে না । যেমন একখণ্ড পাথরকে শক্ত সুতোয় বেধে বৃত্তাকার পথে ঘোরানো হলে পাথর খণ্ডের উপর বল ক্রিয়াশীল থাকা সত্ত্বেও কোন কার্য হবে না । ঠিক একই রকম ভাবে পৃথিবী যখন বৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তখন পৃথিবীর উপর ক্রিয়াশীল সূর্যের মহাকর্ষ বল সব সময় বৃত্তাকার পথের ব্যাসার্ধ বরাবর ক্রিয়া করে । এই বল এবং পৃথিবীর স্মরণ পরস্পরের সঙ্গে লম্বভাবে থাকে । ফলে প্রযুক্ত বল দ্বারা কৃতকার্যের মান শূন্য হয় । অর্থাৎ সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর আবর্তনের ফলে কোন কার্য হয় না ।
Q. এক ব্যক্তি নদীর স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কেটে তীরের সাপেক্ষে স্থির রয়েছে ওই ব্যক্তি কোন কার্য করছে কি?
A: নদীর স্রোতের বিপরীত দিকে সাঁতার কেটে কোন ব্যাক্তি তীরের সাপেক্ষে স্থির থাকলে, বীরের সাপেক্ষে ওই ব্যক্তির সরণ শূন্য হয় । ফলে তীরের সাপেক্ষে ওই ব্যক্তির দ্বারা কৃতকার্যের মানও শূন্য হবে । কিন্তু নদীর তীরের সাপেক্ষে ওই ব্যক্তির সরণ না ঘটলেও, নদীর স্রোতের সাপেক্ষে ওই ব্যক্তির আপেক্ষিক সরণ ঘটতে থাকে । ফলে ওই ব্যক্তির স্রোতের সাপেক্ষে কার্য করে ।
Q. কোন অমসৃণ তলের উপর দিয়ে একটি বস্তুকে কিছুদূর টেনে নিয়ে গিয়ে বস্তুটিকে আবার একই পথে টেনে এনে পূর্বের স্থানে রাখলে কোন কার্য হবে কি?
A: কোন বস্তুকে একটি অমসৃণ তলের উপর দিয়ে কিছু দূর টেনে নিয়ে গিয়ে, আবার তাকে একই পথে টেনে এনে আগের অবস্থানে রাখলে দুবারই ঘর্ষণ বলে বিরুদ্ধে কাজ করতে হওয়ায় মোট কার্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে ।
ক্ষমতা (Power):
কোন ব্যক্তি বা যন্ত্র যখন কোন কাজ করে তখন তার কাজটি শেষ করতে কিছু সময় লাগে ।
মনে কর, একটি যন্ত্র 30 সেকেন্ডে 600 আর্গ কাজ করে । তাহলে যন্ত্রটি সেকেন্ডে 600/30 বা 20 আর্গ কাজ করে । তখন যন্ত্রটির ক্ষমতা হয় সেকেন্ডে 20 আর্গ ।
কার্য করার হারকে ক্ষমতা বলে । কোন বল একক সময়ে যে কাজ করে, তাই হল ক্ষমতার পরিমাপ ।
ক্ষমতা একটি স্কেলার রাশি ।
ক্ষমতা = কৃতকার্য/সময় P = W/t
ক্ষমতা কার্যের পরিমাণ ও সময়ের উপর নির্ভর করে । মনে কর, কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্য এক ব্যক্তি 5 মিনিটে এবং অপর এক ব্যক্তি 10 মিনিটে শেষ করল । তাহলে প্রথম ব্যক্তিকে বেশি ক্ষমতাশালী বলা হবে ।
আবার নির্দিষ্ট সময়ের সাপেক্ষে কৃতকার্যের পরিমাণ বেশি হলে ক্ষমতা বেশি হবে। যেমন 2 মিনিটে A এবং B যথাক্রমে 2 জুল ও 3 জুল কার্য সম্পন্ন করল । অর্থাৎ B-এর ক্ষমতা A-এর ক্ষমতার থেকে বেশি ।
অর্থাৎ কম সময়ে যে যত বেশি কাজ করতে পারে, তার ক্ষমতা তত বেশি ।
ক্ষমতার একক (Units of power):
(I) ক্ষমতার পরম একক (Absolute unit of Power):
CGS পদ্ধতিতে ক্ষমতার পরম একক আর্গ/সেকেন্ড (erg/second) । এক সেকেন্ড সময়ে এক আর্গ কাজ করার ক্ষমতাকে এক আর্গ/সেকেন্ড বলে ।
SI পদ্ধতিতে ক্ষমতার পরম একক জুল/সেকেন্ড বা ওয়াট (watt) । এক সেকেন্ড সময়ে এক জুল কার্য করার ক্ষমতাকে এক ওয়াট বলে ।
1 ওয়াট = 1 জুল / 1 সেকেন্ড = 107 আর্গ / সেকেন্ড ।
(II) ক্ষমতার অভিকর্ষীয় একক (Gravitational unit of Power):
CGS পদ্ধতিতে ক্ষমতার অভিকর্ষীয় একক গ্রাম-সেমি/সেকেন্ড । এক গ্রাম ভরের কোন বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে এক সেকেন্ডে এক সেমি ওপরে তুলতে যে ক্ষমতার প্রয়োজন হয় তাকে 1 গ্রাম-সেমি সেকেন্ড বলে ।
SI পদ্ধতিতে ক্ষমতার অভিকর্ষীয় একক কিগ্রা- মিটার/সেকেন্ড । এক কিগ্রা ভরের কোনো বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে এক সেকেন্ডে এক মিটার ওপরে তুলতে যে ক্ষমতার প্রয়োজন তাকে 1 কিগ্রা-মিটার/সেকেন্ড বলে ।
(III) ক্ষমতার ব্যবহারিক একক (Practical unit of Power):
SI পদ্ধতিতে ক্ষমতার ব্যবহারিক একক ওয়াট বা জুল/সেকেন্ড । অনেক সময় ক্ষমতার বড় একক হিসেবে কিলোওয়াট (kw) ব্যবহার করা হয় । কোন বস্তু এক সেকেন্ডে 1000 জুল কার্য করলে, তার ক্ষমতাকে এক কিলোওয়াট বলে ।
1 কিলোওয়াট = 1000 ওয়াট ।
1 মেগাওয়াট = 1000 কিলোওয়াট = 1000000 ওয়াট ।
হর্সপাওয়ার (HP): অনেক সময় ক্ষমতার ব্যবহারিক একক কে অশ্বশক্তি বা হর্স পাওয়ার-এ প্রকাশ করা হয় । 550 পাউন্ড ভরের কোন বস্তুকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে 1 সেকেন্ডে 1 ফুট ওপরে তুলতে যে ক্ষমতার প্রয়োজন হয় তাকে 1 হর্স পাওয়ার বলে । অর্থাৎ এক সেকেন্ডে 550 ফুট-পাউন্ড কাজ করার ক্ষমতাকে 1 হর্স পাওয়ার বলা হয় ।
1 HP = 550 ft lb/s = 746 watt
Q. বিভিন্ন ওজনের দুই ব্যক্তি একটি বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে একই সময়ে একতলা থেকে দোতলায় উঠলো, কার ক্ষমতা বেশি এবং কেন?
A: মনে কর, প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যক্তির ভর যথাক্রমে m1 ও m2 (m1>m2) । প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যক্তির ওজন হবে যথাক্রমে m1g ও m2g; যেখানে g অভিকর্ষজ ত্বরণ ।
যদি ওই দুই ব্যক্তি t সময়ে h উচ্চতায় উঠে থাকে,
তবে প্রথম ব্যক্তির ক্ষমতা P1 = m1gh/t এবং দ্বিতীয় ব্যক্তির ক্ষমতা P2 = m2gh/t হবে ।
যেহেতু m1>m2 তাই P1>P2 হবে । অর্থাৎ প্রথম ব্যক্তির ক্ষমতা বেশি হবে । অতএব, অধিক ওজন যুক্ত ব্যক্তির ক্ষমতা, অপর ব্যক্তির ক্ষমতার তুলনায় বেশি ।
শক্তি (Energy):
এই বিশ্বে পদার্থ শক্তি পরস্পর গভীর সম্পর্কযুক্ত । পদার্থ নিজে থেকে কোন কার্য করতে করতে পারে না । কিন্তু শক্তি প্রয়োগে পদার্থ গতিশীল হয় এবং কার্য করে ।
কোন বস্তুর কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে । কোন বস্তু মোট যে পরিমাণ কার্যকর করতে পারে, তাই হলো ওই বস্তুর শক্তির পরিমাপ ।
শক্তি এবং কার্য একই ধরনের রাশি ।
বস্তুর শক্তির পরিমাপ = বস্তু দ্বারা কৃতকার্য = প্রযুক্ত বল x বলের প্রয়োগ বিন্দুর সরণ ।
কার্যের মতো শক্তি একটি স্কেলার রাশি ।
শক্তির একক (Units of energy):
কোন বস্তুর শক্তি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্যকে সূচিত করে । তাই সত্যি ও কার্যের একক একই ।
CGS পদ্ধতিতে শক্তির পরম একক আর্গ । SI পদ্ধতিতে শক্তির পরম একক জুল ।
শক্তি কয় প্রকার ও কি কি?
প্রকৃতিতে শক্তি প্রধানত আটটি রূপে প্রকাশিত হয় । যথা – 1. যান্ত্রিক শক্তি, 2. তাপশক্তি, 3. আলোক শক্তি, 4. শব্দ শক্তি, 5. চৌম্বক শক্তি, 6. তড়িৎ শক্তি, 7. রাসায়নিক শক্তি এবং 8. পারমাণবিক শক্তি ।
যান্ত্রিক শক্তি (Mechanical Energy):
কোন বস্তুর যান্ত্রিক কার্য করার সামর্থ্যকে তার যান্ত্রিক শক্তি বলে । যান্ত্রিক শক্তিকে দু ভাগে ভাগ করা যায়- (I) স্থিতিশক্তি এবং (II) গতিশক্তি ।
(I) স্থিতিশক্তি (Potential Energy EP):
দম দেওয়া ঘড়িতে দম দিয়ে ঘড়ির স্প্রিংকে গুটিয়ে ছোট করে দেওয়ায় স্প্রিং এর শক্তি সঞ্চিত হয় । গোটা নো স্প্রিং ওর স্বাভাবিক আকৃতিতে ফিরে যাওয়ার সময় কার্য করে ফলে ঘড়ির কাঁটা গুলি গতিশীল হয় এবং ঘড়ি চলতে থাকে ।
একটি পেরেককে সোজাভাবে মাটির উপর রেখে তার উপর একটি হাতুড়ি আলতো করে স্পর্শ করে রাখা হল । এক্ষেত্রে পেরেকটি মাটির ভিতরে ঢুকে যায় না । কিন্তু হাতুড়িটি একটি উঁচু করে তুলে পেরেকের উপর আঘাত করলে পেরেকটি মাটির ভিতরে ঢুকে যায় । হাতুড়িটি উপরে তোলাতে হাতুড়িটিতে কিছু কার্য করার সামর্থ্য জন্মায় বলেই এটা সম্ভব হয় ।
উপরের উদাহরণগুলি থেকে আমরা বলতে পারি যে, কোন বস্তুর স্বাভাবিক অবস্থান বা আকৃতির পরিবর্তনের ফলে বস্তুটিতে একটি কাজ করার সামর্থ্য জন্মায় কাজ করার এই সামর্থ্যকে স্থিতিশক্তি বলে ।
কোন বস্তু তার স্বাভাবিক অবস্থান বা আকৃতির পরিবর্তনের জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে বস্তুটির স্থিতিশক্তি বলে ।
স্থিতিশক্তি আবার দু-প্রকার- (i) অভিকর্ষীয় স্থিতিশক্তি এবং (ii) স্থিতিস্থাপক স্থিতিশক্তি ।
(i) অভিকর্ষীয় স্থিতিশক্তি:
কোন বস্তু তার স্বাভাবিক অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে বস্তুটির অভিকর্ষীয় স্থিতিশক্তি বলে ।
যেমন- বাঁধের উঁচু জলাধারে সঞ্চিত জল তার স্বাভাবিক অবস্থানের পরিবর্তনের জন্য স্থিতিশক্তি লাভ করে । ওই জলকে নিচে প্রবাহিত করলে তা কার্যকরতে সক্ষম হয় এবং এর সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে জলবিদ্যুৎ সৃষ্টি করা হয় ।
(ii) স্থিতিস্থাপক স্থিতিশক্তি:
কোন বস্তু তার স্বাভাবিক আকৃতির পরিবর্তনের জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে বস্তুটির স্থিতিস্থাপক স্থিতিশক্তি বলে ।
যেমন- ধনুক স্বাভাবিক আকারে থাকলে তা থেকে তীর ছোড়া যায় না । কিন্তু বাঁকানো অবস্থায় আনলে আকৃতির পরিবর্তনের জন্য ওর মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয় । ফলে ধনুক কার্য করতে সক্ষম হয় এবং ধনুক থেকে তীর ছোড়া যায় ।
অভিকর্ষীয় স্থিতিশক্তির পরিমাপ:
ধরা যাক, m ভরের কোন বস্তুকে ভূপৃষ্ঠ থেকে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে h উচ্চতায় তোলা হল । অভিকর্ষজ ত্বরন g হলে, বস্তুর উপর ক্রিয়াশীল বল = বস্তুর ওজন = বস্তুর ভর x অভিকর্ষজ ত্বরণ = mg
সুতরাং বস্তুটির স্থিতিশক্তি = বস্তুটিকে h উচ্চতায় নিয়ে যেতে কৃতকার্য = বল x সরণ = mgh
অর্থাৎ কোন বস্তুর স্থিতিশক্তি (EP) = বস্তুর ভর x অভিকর্ষজ ত্বরণ x উচ্চতা = mgh
(II) গতিশক্তি (Kinetic Energy EK):
বন্দুকের গুলি স্থির অবস্থায় থাকলে কোন কার্যকর করতে পারে না । কিন্তু গতিশীল বলে নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যবস্তুকে ভেদ করতে পারে । অর্থাৎ গতির ফলে বুলেটের কার্য করার সামর্থ্য জন্মায় । এছাড়া গতি যত বেশি হয় বুলেটের কার্যকারী ক্ষমতাও তত বাড়ে ।
নদীর জল স্থির থাকা অবস্থায় থাকলে নদীতে ভাসমান নৌকা একটি জায়গাতে স্থির অবস্থায় থাকবে। নদীর প্রবাহমান জলের স্রোতে একটি নৌকা ভাসিয়ে দিলে নৌকাটি স্রোতের দিকে ভেসে যাবে । ওইদিকে বাতাসের বেগকে পালে লাগালে নৌকাটি আরও দ্রুত চলবে ।
পরের উদাহরণগুলি থেকে আমরা বলতে পারি যে, গতির জন্য গতিশীল বস্তুর কাজ করার সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে এই শক্তিকে গতিশক্তি বলে ।
কোন গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে বস্তুটির গতিশক্তি বলে ।
গতিশক্তির পরিমাপ:
বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে কোন গতিশীল বস্তুকে থামাতে হলে, থেমে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বস্তুটি ওই বলের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ কার্য করে, তাই হল বস্তুটির গতিশক্তির পরিমাপ ।
যদি কোন বস্তুর ভর m এবং বেগ v হয় তবে ঐ
বস্তুর গতিশক্তি (EK) = 1/2 x বস্তুর ভর x বস্তুর বেগ2 = 1/2 mv2
EK = 1/2 mv2 প্রমাণ:
u বেগে গতিশীল m ভরের বস্তুর ওপর F বলের ক্রিয়ায় S দূরত্ব অতিক্রম করে বস্তুটির অন্তিম বেগ হল v এবং ত্বরণ হল a ।
কৃতকার্য (W) = বল x সরণ = F . S
W = ma . S [ F = ma সমীকরণ থেকে ]
W = ma (v2 – u2)/2a [ v2 – u2 = 2as সমীকরণ থেকে ]
W = ½ x m (v2 – u2)
বস্তুটি প্রথমে স্থির অবস্থায় থাকলে প্রাথমিক বেগ অর্থাৎ u = 0 হবে
W = 1/2 mv2 (প্রমাণিত)