প্রশ্নঃ চুম্বক বলতে কী বোঝোয়?
উত্তর: যে সব পদার্থ লোহা, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি ধাতুকে আকর্ষণ করে এবং যাদের দিকনির্দেশক ধর্ম আছে তাদের চুম্বক বলে।
প্রশ্নঃ চুম্বকের ধর্ম গুলি কি কি?
উত্তর: চুম্বকের ধর্ম সাধারণত দুটি-
১. আকর্ষণী ধর্ম: চুম্বকের আকর্ষণ ধর্ম আছে বলে চুম্বক লোহা, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি ধাতুকে আকর্ষণ করতে পারে।
২. দিকনির্দেশক ধর্ম: কোন চুম্বকের মাঝখানে সুতো দিয়ে বেঁধে বাধাহীনভাবে ঝুলিয়ে দিলে চুম্বকটি উত্তর দক্ষিণ মুখ করে স্থির হয়ে যায়। চুম্বকের এই ধর্মকে দিকনির্দেশক ধর্ম বলে।
প্রশ্নঃ চৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: কোন চুম্বক পদার্থ অন্য যে সব পদার্থকে আকর্ষণ করে তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে।
উদাহরণ: লোহা, নিকেল, কোবাল্ট প্রভৃতি।
প্রশ্নঃ অচৌম্বক পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: কোন চুম্বক পদার্থ যে সব পদার্থকে আকর্ষণ করতে পারে না তাদের চৌম্বক পদার্থ বলে।
উদাহরণ: কাঠ, কাগজ, প্লাস্টিক, কাচ প্রভৃতি।

প্রশ্নঃ চুম্বক প্রধানত কত রকমের হয়ে থাকে?
উত্তর: চুম্বক প্রধানত দু রকমের হয়ে থাকে-
১. প্রাকৃতিক চুম্বক: প্রকৃতিতে যে সব চুম্বক পাওয়া যায় তাদের প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। এই ধরনের চুম্বক হল খনিজ চুম্বক। এই চুম্বক বাজারে সহজে কিনতে পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিক চুম্বক নির্দিষ্ট আকারের হয় না এবং এই ধরনের চুম্বকের শক্তিও বেশী হয় না। ম্যাগনেসিয়া নামক অঞ্চলে এরকম প্রচুর পাথর পাওয়া যায়। এই ধরনের পাথরকে ম্যাগনেটাইট বলে।
২. কৃত্রিম চুম্বক: চৌম্বক পদার্থকে বিশেষ উপায়ে চুম্বকে পরিণত করলে তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে। এই ধরনের চুম্বকের শক্তি বেশি হয় ও বিভিন্ন কাজে কৃত্রিম চুম্বকের ব্যাপক ব্যবহার আছে। আমাদের চারপাশে যে সব চুম্বক দেখতে পাই সে সবই কৃত্রিম চুম্বক। লোহা, নিকেল, কোবাল্ট এবং এদের সংকর ধাতুগুলিকে কৃত্রিম চুম্বকে পরিণত করা যায়। এগুলি হল কৃত্রিম চুম্বক।
প্রশ্নঃ চুম্বকের মেরু কাকে বলে?
উত্তর: কোন চুম্বকের দুই প্রান্তে যে দুটি বিন্দুতে আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি সেই দুটি বিন্দুকে ঐ চুম্বকের মেরু বলে।
কোন চুম্বকের মেরু দুটি চুম্বকের একেবারে শেষ প্রান্তে থাকে না, চুম্বকের প্রান্ত দুটির কাছাকাছি কোন বিন্দুতে মেরু দুটি অবস্থান করে।
চুম্বকের দুটি মেরু – উত্তর মেরু (North Pole) ও দক্ষিণ মেরু (South Pole)।

প্রশ্নঃ চৌম্বক দৈর্ঘ্য কাকে বলে?
উত্তর: কোন চুম্বকের মেরু দুটির মধ্যবর্তী রৈখিক দূরত্বকে ঐ চুম্বকের চৌম্বক দৈর্ঘ্য বলে। সাধারনত কোন চুম্বকের চৌম্বক দৈর্ঘ্য, চুম্বকের প্রকৃত দৈর্ঘ্যের 86% (মতান্তরে 85%) হয়।
অর্থাৎ, চৌম্বক দৈর্ঘ্য = 0.86 × চুম্বকের প্রকৃত দৈর্ঘ্য
প্রশ্নঃ চুম্বকের উদাসীন অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বকের মাঝামাঝি অঞ্চলে কোন চৌম্বক ধর্ম থাকে না অর্থাৎ কোন আকর্ষণ ক্ষমতা থাকে না, অঞ্চলকে চুম্বকের উদাসীন অঞ্চল বলা হয়ে থাকে।

প্রশ্নঃ চৌম্বক অক্ষ কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বকের মেরু দুটির সংযোগকারী কাল্পনিক সরলরেখাকে চৌম্বক অক্ষ বলা হয়।
প্রশ্নঃ চৌম্বক ক্ষেত্র কাকে বলে?
উত্তর: চুম্বকের চারপাশে যে স্থান বা ক্ষেত্র জুড়ে ওই চুম্বকের আকর্ষণ বা বিকর্ষণ ধর্ম কাজ করে, সেই স্থান বা ক্ষেত্রটিকে ঐ চুম্বকের চৌম্বক ক্ষেত্র বলে।
প্রশ্নঃচুম্বকের বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে – প্রমাণ করো।
উত্তর: দুটি দন্ড চুম্বকে বাধাহীনভাবে সুতোর সাহায্যে ঝুলিয়ে দিলে চুম্বকের দিকদর্শী ধর্মের জন্য চুম্বক দুটি উত্তর দক্ষিণ দিক মুখ করে স্থির হয়ে যাবে। এর সাহায্যে আমরা চৌম্বক দুটির মেরু স্থির করতে পারব। উত্তর দিকের মেরু উত্তরমেরু এবং দক্ষিণ দিকের মেরু দক্ষিণমেরু।
এবার যদি একটি চুম্বকের উত্তর মেরু এবং অপর চুম্বকের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি নিয়ে আসা হয় তবে দেখা যাবে চুম্বক দুটি খুব সহজেই একে অপরকে আকর্ষণ করছে। আবার যদি একটি চুম্বকের উত্তর মেরু এবং অপর চুম্বকের উত্তর মেরুর কাছে নিয়ে আসা হয় তখন দেখা যাবে মেরু দুটি পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এর থেকে প্রমাণ হয় চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে।
চুম্বকের মেরু গুলোর অবস্থান পরিবর্তন করে যদি পরীক্ষাটি আবার করা হয় তবে একই ফল পাওয়া যাবে – এর থেকে প্রমাণিত হয় চুম্বকের বিপরীত মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে।
প্রশ্নঃ বিকর্ষণই চুম্বকত্বের উৎকৃষ্ট প্রমাণ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ কোন একটি দন্ড চুম্বক কিনা তা বিকর্ষণ এর মাধ্যমে খুব সহজেই প্রমাণ পাওয়া যায়।
দন্ডটিকে সুতোর সাহায্যে ঝুলিয়ে দিয়ে দন্ডটির কাছে আরেকটি চুম্বক দন্ড নিয়ে আসা হল। যদি দণ্ডটি চুম্বক টিকে আকর্ষণ করে তবে দুটো ঘটনা হতে পারে 1) দণ্ডটি একটি চৌম্বক পদার্থ যা চুম্বক টিকে আকর্ষণ করছে 2) আবার হতে পারে দন্ডটি একটি চুম্বক পদার্থ তাদের বিপরীত মেরু পরস্পরের কাছে এসেছে ফলে আকর্ষণ হচ্ছে। ফলে আকর্ষণ থেকে প্রমাণ হয়না দণ্ডটি চুম্বক না চৌম্বক পদার্থ।
আর যদি চুম্বক পদার্থটিকে দন্ডটির কাছে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দণ্ডটি বিকর্শিত হয় তবে বুঝতে হবে অবশ্যই দণ্ডটি চুম্বক পদার্থ কেননা চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় বিকর্ষণই চুম্বকত্বের প্রকৃত প্রমাণ।
প্রশ্নঃ চুম্বক শলাকা কি? এর ব্যবহার লেখ।
উত্তরঃ চুম্বক সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য এক বিশেষ ধরণের চুম্বক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি আসলে একটা ছোট্ট হালকা চুম্বকিত ইস্পাতের পাত। দু-প্রান্ত সুচালো এই চুম্বক একটা খাড়া দণ্ডের ওপর মুক্ত অবস্থায় রাখা হয়। যাতে শলাকাটি সহজেই বাধাহীনভাবে ওই দণ্ডের ওপর ঘুরতে পারে।কোন কোন ক্ষেত্রে এটিকে বায়ুর বাধা উপেক্ষা করার জন্য ছোট্ট কাচের বাক্সের মধ্যে রাখা হয়।


প্রশ্নঃ চৌম্বক আবেশ বলতে কি বোঝ?
উত্তর: কোন চৌম্বক পদার্থকে একটি শক্তিশালী চুম্বকের সংস্পর্শে বা কাছে আনলে সাময়িক ভাবে চৌম্বক পদার্থটি চুম্বকে পরিণত হয়ে পড়ে। চৌম্বক পদার্থের এই রকম সাময়িক চুম্বকে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে চৌম্বক আবেশ বলে। মূল চুম্বক পদার্থটিকে থেকে সরিয়ে নিলে চৌম্বক পদার্থের চুম্বকত্ব নষ্ট হয়ে যায়। চৌম্বক আবেশের ফলে যে চুম্বকত্ব সৃষ্টি হয় তাকে আবিষ্ট চুম্বকত্ব বলে।

প্রশ্নঃ ‘আকর্ষণের পূর্বে আবেশ হয়‘- কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কোন চুম্বক পদার্থ যখন কোন চৌম্বক পদার্থ কে আকর্ষণ করে, তখন তার আগে ওই চৌম্বক পদার্থটিকে আবেশিত করে সাময়িকভাবে সেই পদার্থকে চুম্বকে পরিণত করে, এবং পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই বলা যায় ‘আকর্ষণের পূর্বে আবেশ হয়’।
প্রশ্নঃ একক মেরু বিশিষ্ট চুম্বক পাওয়া সম্ভব কি?- বুঝিয়ে বল।
উত্তর: একটি চুম্বককে ভেঙ্গে দু’টুকরো করলে প্রতিটি টুকরোই দুই মেরু বিশিষ্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ চুম্বকের মত আচরণ করে। টুকরো দুটিকে আরো ছোট ছোট টুকরোতে পরিণত করলেও দেখা যাবে প্রতিটি অংশই এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চুম্বকের মত আচরণ করছে এর থেকে বলা যায় – একক মেরু বিশিষ্ট চুম্বক পাওয়া সম্ভব নয়।
প্রশ্নঃ ‘পৃথিবী নিজেই একটি চুম্বক‘- উক্তিটির স্বপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: একটি লোহার দন্ডকে বহুদিন ধরে পৃথিবীর উত্তর-দক্ষিণ দিক বরাবর রেখে দিলে যাবে ওই লোহার দন্ডটির মধ্যে খুব অল্প পরিমাণের চুম্বকত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এবং দন্ডটির উত্তর দিক চুম্বকের উত্তর মেরুর মত ও দক্ষিণ দিক চুম্বকের দক্ষিণ মেরুর মত আচরণ করছে।
লোহা একটি চৌম্বক পদার্থ ও পৃথিবীর চুম্বকত্বে আবিষ্ট হয়ে লোহা চুম্বকের মতো আচরণ করেছে। এই ঘটনাটি থেকে প্রমাণিত হয় ‘পৃথিবী নিজেই একটি চুম্বক’।
প্রশ্নঃ তড়িৎ চুম্বক কাকে বলে?
উত্তর: একটি কাঁচা লোহার দন্ডের ওপর অন্তরিত তামার তার কুন্ডলীর মত করে জড়িয়ে ঐ তারের মধ্য দিয়ে সমপ্রবাহী তড়িৎ প্রবাহিত করলে লোহার দন্ডটি সাময়িকভাবে চুম্বকে পরিণত হয়। এবং তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ করলে চুম্বকটির চুম্বকত্ব লোপ পেয়ে যায়। এই ধরনের চুম্বকে তড়িৎ চুম্বক বলে।


প্রশ্নঃ চুম্বকের ব্যবহার লেখ।
উত্তর: আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চুম্বকের বহুল ব্যবহার রয়েছে। যেমন-
১) সমুদ্রে দিকনির্দেশক যন্ত্র হিসেবে নাবিকরা ‘নৌকম্পাস’ ব্যবহার করে। একটা সূচাগ্র ধাতব দন্ডের উপর একটি চুম্বক শলাকা বসিয়ে নৌকম্পাস তৈরি করা হয়।
২) লাউড স্পিকারে চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
৩) ফ্রিজের দরজায় চুম্বক ব্যবহৃত হয়।
৪) ATM(Automated Teller Machine) ও ক্রেডিট কার্ডে চুম্বকিত স্ট্রিপ ব্যবহার করা হয়।
৫) কম্পিউটারের হার্ডডিস্কে প্লাস্টিকের চাকতির উপর চুম্বকিত পদার্থের আস্তরণ থাকে।
৬) ইলেকট্রিক কলিংবেলে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করা হয়।
৭) চোখের ভেতর থেকে লোহার চূর্ণ বের করার জন্য ডাক্তাররা এক ধরনের বিশেষ তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করেন।
৮) বিভিন্ন রকম মোটরে তড়িৎ চুম্বক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ চুম্বকের চুম্বকত্ব কি কি কারনে নষ্ট হতে পারে।
উত্তর: বিভিন্ন কারণে চুম্বকের চুম্বকত্ব হ্রাস পেতে পারে বা নষ্ট হতে পারে। যেমন-
১) কোন চুম্বককে ওপর থেকে ফেলে দিলে বা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে চুমুকের চুম্বকত্ব হ্রাস পায়।
২) চুম্বক কে উত্তপ্ত করলে চুম্বকের চুম্বকত্ব হ্রাস পায় আবার ঠান্ডা করলে চুম্বকের চুম্বকত্ব আগের অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু একটি বিশেষ তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে চুম্বকের চুম্বকত্ব চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়।
যে তাপমাত্রায় কোন চুম্বকের চুম্বকত্ব চিরতরে নষ্ট হয়, সেই তাপমাত্রাকে ওই চুম্বকের উপাদানের কুরি বিন্দু বলা হয়। তখন চৌম্বক পদার্থটি অচৌম্বক পদার্থে পরিণত হয়। কুরি বিন্দু মান বিভিন্ন চৌম্বক পদার্থের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন লোহা বা ইস্পাতের ক্ষেত্রে কুরি বিন্দু 750°C, নিকেল এর ক্ষেত্রে কুরি বিন্দু প্রায় 360°C।
৩) কোন চুম্বকের গায়ে অন্তরিত তামার তার জড়িয়ে তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে চুম্বকের চুম্বকত্ব নষ্ট হয়।
৪) দুটি চুম্বকের সমমেরু কাছাকাছি থাকলে চুম্বক গুলির চুম্বকত্ব হ্রাস পেতে থাকে।
দৈনন্দিন জীবনে চুম্বকের ব্যবহার–
১। ডেবিট, ক্রেডিট এবং এটিএম কার্ডগুলির একটিতে একটি ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ থাকে। এই স্ট্রিপ ব্যবহারকারীর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য এনক্রিপ্ট করে এবং তাদের অ্যাকাউন্টের সাথে লিঙ্ক করে।
২। পুরানো টেলিভিশন (CRT মডেল)) এবং পুরানো বৃহৎ কম্পিউটার মনিটরে একটি ক্যাথোড রে টিউব থাকে যা একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটে কাজ করে ইলেকট্রনকে স্ক্রিনে সরাসরি পাঠাতে।
৩। VHS টেপ চৌম্বকীয় টেপের একটি রোল নিয়ে গঠিত। শব্দ এবং ভিডিও গঠনকারী ডেটা টেপের চৌম্বকীয় ওভারলেতে এমবেড করা হয়।
৪। সিগন্যাল বা বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে (গতি যা শব্দ উৎপন্ন করে) রূপান্তর করতে বেশিরভাগ মাইক্রোফোন এবং স্পিকার একটি বর্তমান–বহনকারী কয়েল এবং একটি স্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করে। কুণ্ডলীটি স্পিকার শঙ্কুর সাথে সংযুক্ত একটি রিলের চারপাশে আবৃত থাকে এবং স্থায়ী চুম্বকের ক্ষেত্রের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এমন একটি পরিবর্তনশীল স্রোত হিসাবে সংকেত বহন করে।
৫। বিভিন্ন ধরণের বৈদ্যুতিক মোটর স্থায়ী চুম্বক এবং একটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটের সংমিশ্রণের উপর নির্ভর করে। লাউডস্পিকারের মতো, তারা বৈদ্যুতিক শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। একটি জেনারেটর বিপরীত নীতি ব্যবহার করে: এটি একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের বরাবর একটি পরিবাহী স্থানচ্যুত করে যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে।
৬। বৈদ্যুতিক গিটারগুলি গিটারের স্ট্রিংগুলির কম্পনকে পরিবর্ধনের জন্য বৈদ্যুতিক স্রোতে রূপান্তর করার জন্য চৌম্বকীয় পিকআপ ব্যবহার করে। এটি গতিশীল মাইক্রোফোন এবং স্পিকারের পিছনের ধারণার বিপরীত কারণ কম্পনগুলি সরাসরি চুম্বক দ্বারা স্বীকৃত হয় (কোন ডায়াফ্রাম ব্যবহার করা হয় না)।
৭। রসায়নবিদরা উত্পাদিত যৌগ সনাক্ত করতে পারমাণবিক চৌম্বকীয় অনুরণন ব্যবহার করেন। হাসপাতালগুলি অস্ত্রোপচার ছাড়াই রোগীর অঙ্গগুলির সমস্যাগুলি সনাক্ত করতে চৌম্বকীয় অনুরণন ইমেজিং সরঞ্জাম ব্যবহার করে।
৮। একটি কম্পাসে একটি চৌম্বকীয় পয়েন্টার থাকে যা একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে নিজেকে অভিমুখী করতে স্থগিত করে। এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাপেক্ষে যে দিকে এটি স্থাপন করা হয়েছে সে অনুযায়ী এটি বিচ্যুত হবে।
৯। কাছাকাছি পরিসরে মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে মোকাবেলা করার জন্য চুম্বকের ক্ষমতার কারণে, চুম্বকগুলি প্রায়শই । শিশুদের খেলনাগুলিতে ব্যবহৃত হয়।
১০। চুম্বকগুলি খুব ছোট বা নাগালের বাইরে চৌম্বকীয় বস্তুগুলি তুলতে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্ক্রু ড্রাইভার চুম্বক করা হয়। চুম্বকগুলি নন–চৌম্বকীয় ধাতু থেকে চৌম্বকীয় ধাতুকে পৃথক করার জন্য উদ্ধার এবং স্ক্র্যাপ অপারেশনে ব্যবহৃত হয়।
১১। কিছু তারের সংযোগের জন্য ব্যর্থ–নিরাপদ ডিভাইসেও চুম্বক ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পাওয়ার কর্ডগুলি চৌম্বকীয় হয় যাতে বন্দরে দুর্ঘটনাজনিত প্রতিবন্ধকতা এড়ানো যায়। অ্যাপল ম্যাকবুকে ম্যাগসেফ ব্যবহার করে পাওয়ার কানেকশন তার একটি উদাহরণ।
১২। ম্যাগনেটিক লেভিটেশন ট্রান্সপোর্ট (ম্যাগলেভ) হল এক ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বলের মাধ্যমে যানবাহনকে স্থগিত, চালিত এবং গাইড করে। এটি দক্ষতার সাথে ঘূর্ণায়মান প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে, যানবাহনগুলিকে প্রচণ্ড গতিতে চলতে সক্ষম করে (প্রচলিত যানবাহনের তুলনায়)।
মেরুজ্যোতি, মেরুপ্রভা, আরোরা বা আরোরা অস্ট্রালিস কি?
থার্মোস্ফিয়ারের অন্তর্গত আয়নোস্ফিয়ারে থাকা অক্সিজেন নাইট্রোজেনের অণুগুলি সুর্য থেকে বিচ্ছুরিত উচ্চ শক্তিসম্পন্ন গামা রশ্মি, এবং X রশ্মির প্রভাবে আয়নিত হয়। এর ফলে বিভিন্ন আধানযুক্ত কণা এবং সেই সঙ্গে অসংখ্য মুক্ত ইলেকট্রনও উৎপন্ন হয়। এই আধানযুক্ত কণাগুলির সঙ্গে ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ায় মেরু-অঞ্চলের আকাশে যে উজ্জ্বল আলোকপ্রভা বা ছটা সৃষ্টি হয় তাকে মেরুজ্যোতি বলে। উত্তর মেরুতে সৃষ্ট মেরুজ্যাতিকে সুমেরু প্রভা এবং দক্ষিণ মেরুতে সৃষ্ট মেরুজ্যোতিকে কুমেরু প্রভা বলে।
মেরুজ্যোতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
মেরুজ্যোতি, মেরুপ্রভা, আরোরা বা আরোরা অস্ট্রালিস (আরোরা উষা) হল আকাশে একধরনের প্রাকৃতিক আলোর প্রদর্শনী। প্রধানত উঁচু অক্ষাংশের এলাকাগুলোতে আরোরা’র দেখা মিলে। আরোরা দেখতে অত্যন্ত সুন্দর।
আরোরা সৃষ্টির কারণ
সূর্য আমাদের থেকে প্রায় ৯.৩ কোটি মাইল (প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত। কিন্তু এর প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।সৌরঝড়ে চার্জিত কণা (প্লাজমা) মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে।পৃথিবীতে এসব কণা পৌছালে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এবং বায়ুমণ্ডলের সাথে প্রতিক্রিয়া করে। যখন সূর্যের চার্জিত কণাগুলো আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের অণু-পরমাণুকে আঘাত করে তখন সেই চার্জিত কণাগুলো বায়ুমন্ডলের অণু-পরমাণুগুলোকে আন্দোলিত করে এবং উজ্জ্বল করে তোলে। পরমাণু আন্দোলিত হওয়ার অর্থ হল এই যে, যেহেতু পরমাণু নিউক্লিয়াস এবং নিউক্লিয়াসকে আবর্তনকৃত ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত তাই যখন সূর্য থেকে আগত চার্জিত কণা বায়ুমণ্ডলের পরমাণুকে আঘাত করে তখন ইলেকট্রনগুলো উচ্চ শক্তিস্তরে (নিউক্লিয়াস থেকে আপেক্ষিকভাবে অনেকদূরে) ঘুরতে শুরু করে। তারপর যখন আবার কোনো ইলেক্ট্রন নিম্ন শক্তিস্তরে চলে আসে তখন সেটি ফোটন বা আলোতে পরিণত হয়।
আরোরাতে যা ঘটে তেমনটি ঘটে নিয়নের বাতিতেও। নিয়ন টিউবের মধ্যে নিয়ন গ্যাসের পরমাণুগুলোকে আন্দোলিত করবার জন্য ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ। তাই নিয়নের বাতিগুলো এরকম উচ্চ মানের রঙ্গিন আলো দেয়। আরোরাও ঠিক এভাবে কাজ করে-তবে এটি আরো বড় মাত্রায় হয়। আরোরাগুলো মাঝে মাঝে আলোর পর্দার মতো দেখায়। তবে এরা গোলাকার অথবা সর্পিল বা বাঁকানোও হতে পারে। বেশিরভাগ আরোরাতে সবুজ রং এবং গোলাপী রং দেখা যায়। তবে অনেকসময় লাল রং বা বেগুনী রঙের হতে পারে।
আরোরা সাধারণত দেখা যায় দক্ষিণ ও উত্তরের দেশগুলোতে।কানাডা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিনল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে আরোরার দেখা মিলে। মানব ইতিহাস জুড়ে আরোরার রং গুলো রহস্যময়। বিভিন্ন মিথোলোজিতে বিভিন্ন কুসংস্কার উল্লেখ করা হয়েছে এই নিয়ে। তবে বিজ্ঞান বলেঃ আমাদের বায়ুমন্ডলের গ্যাসগুলোই হল আরোরার বিভিন্ন রঙের কারণ। উদাহরণ: আরোরার সবুজ রঙের কারণ হল অক্সিজেন আবার আরোরার লাল এবং নীল রঙের জন্য দায়ী হল নাইট্রোজেন গ্যাস।

জীবের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ায় চুম্বক ক্ষেত্রের ভূমিকা আলোচনা করো ।
১। পরিযায়ী পাখিরা ভুচুম্বক বলরেখা অনুসরণ করে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে পারে এবং ফিরে আসতে পারে ।
২। ভু-চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে মেরু পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চলে মেরুজ্যোতি তৈরি হয় যা ওই অঞ্চলের জীবজগতের কাজে লাগে ।
৩। পায়রার খুলি ও মস্তিকের মাঝে এক ধরণের চৌম্বকীয় বস্তু আছে যার জন্য পায়রা মেঘলা অন্ধকার দিনে পরিচিত চিহ্ন দেখতে না পেলেও সঠিকভাবে বাসায় ফিরে আসে ।