ঝাড়গ্রাম (Jhargram)

ঝাড়গ্রাম কথাটির অর্থ ঘন অরণ্য পরিবৃত একটি গ্রাম। পাহাড়-নদী-জঙ্গল — মিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে পরিপূর্ণ ঝাড়গ্রাম অসাধারণ একটি জায়গা।

ঝাড়গ্রাম মূলত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের জেলা। সীমানা লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশা। স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিবেশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেকটাই আলাদা। এখানকার মাটি সাধারণত পাথুরে ও লাল। শক্ত মাটিতে যেসব গাছ ভালো হয় তাদের সংখ্যা এখানে বেশি। যেমন শাল, পলাশ, মহুয়া, সেগুন ইত্যাদি। এখানে দেখতে পাবেন শালের ঘন জঙ্গল। এছাড়াও আছে কাষ্ঠল লতার অরণ্য। রয়েছে কম উচ্চতার পাহাড়, পাহাড়ী ঝরণা, একাধিক নদী এবং হ্রদ। ঝাড়গ্রামে দেখার জিনিস বলতে পাবেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। তবে এগুলি ছাড়াও রয়েছে প্রাচীন কণকদুর্গা মন্দির, বড় চিড়িয়াখানা (ডিয়ার পার্ক), ভেষজ উদ্যান, আর বিখ্যাত রাজবাড়ি৷ আর শহরটাও খুব সুন্দর একটা দিন ঘুরে দেখার জন্য।

কীভাবে যাবেন—

ঝাড়গ্রাম পৌঁছনোর উপায় দুটি। সড়কপথ আর রেলপথ। সড়কপথে গাড়ি অথবা বাইকে যাওয়া যায়। রাস্তা খুবই ভালো। কলকাতা থেকে সড়ক পথে দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিমি। কলকাতা – মুম্বাই জাতীয় সড়ক (NH6) ধরে লোধাশুলি হয়ে ঝাড়গ্রামে যাওয়া যায়। প্রায় চার ঘণ্টা মত সময় লাগে। আবার খড়গপুরের চৌরঙ্গী থেকে মেদিনীপুর শহর দিয়ে ধেরুয়া হয়ে সহজে যাওয়া যায় ঝাড়গ্রামে।

অন্যদিকে, রেলপথে ঝাড়গ্রাম যাওয়া খুব সহজ।  কলকাতা থেকে আসতে হলে হাওড়া স্টেশন থেকে বিকেলের স্টীল এক্সপ্রেস বা সকালের ইস্পাত এক্সপ্রেস সবথেকে ভালো। ট্রেনে সময় লাগে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা৷ এছাড়া অন্য অনেক ট্রেন রয়েছে। টাটানগর, রৌরকেল্লা, পুরুলিয়া ইত্যাদি জায়গার সাথেও রেল যোগাযোগ আছে। মেদিনীপুর বা বাঁকুড়ার দিক থেকে যেতে হলে খড়গপুর এসে ট্রেন পাল্টে ঝাড়গ্রাম যাবার ট্রেন ধরতে হবে।

কি কি দেখবেন :

ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি —

ঝাড়গ্রাম শহরে অবস্থিত রাজবাড়ির গৌরবময় ইতিহাস এবং দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য এখনও বিরাজমান। সর্বেশ্বর সিংহ এই রাজবংশের সূচনা করেন। রাজবাড়ি ঘুরে দেখার পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। রাজবাড়িতে প্রিমিয়াম কোয়ালিটিতে থাকার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও একে কেন্দ্র করেই তৈরী হয়েছে রাজবাড়ি ইকো ট্যুরিজম কমপ্লেক্স। কমপ্লেক্সের মধ্যে একটা লেকের চারিদিকে রয়েছে আলাদা আলাদা কটেজ, একটি পার্ক এবং বড় রেস্তঁরা। এসবের বুকিং পাওয়া যায় রাজ্য পর্যটন দফতরের ওয়েবসাইটে।

 

জুলজিক্যাল গার্ডেন / ডিয়ার পার্ক  —

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে কিছু দূরে রয়েছে সাবিত্রী মন্দির। ১ কিমি দূরে কলাবনিতে দৃষ্টিনন্দন শাল জঙ্গলে লোক ও আদিবাসী সংস্কৃতির উপাদান আছে বাঁদরভুলা সংগ্রহশালায় । ঝাড়গ্রাম শহরের পূর্বপ্রান্তে শহর থেকে সড়কপথে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে বনভূমির মধ্যে ডিয়ার পার্ক বা জুলজিক্যাল গার্ডেন। এখানে চিতা, হরিণ, অন্যান্য জন্তু, কৃষ্ণসার হরিণ, ময়ূর, ভাল্লুক, হায়না, বাঁদর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ সহ বন্য প্রাণীদের দেখা যায়।

চিল্কিগড় —

ঝাড়গ্রাম থেকে চিল্কিগড়ের এর দূরত্ব মোটামুটি ১২ কিলোমিটার। যাবার পথে কেন্দুয়া নামের একটি জায়গাতে পরিযায়ী পাখিদের দেখতে পাবেন। এরপর চলে আসুন চিল্কিগড়। এখানে রয়েছে একটি Sacred Grove, যা মনকে এক নিমেষেই শান্ত ও শীতল করে দেবার ক্ষমতা রাখে। এখানে আপনি দেখতে পাবেন অসংখ্য প্রজাতির কাষ্ঠল লতা এবং শতাধিক প্রজাতির ঔষধি গাছ। এই ছোট্ট অরণ্যটি বর্তমানে একটি Biodiversity Heritage Site. অনেক পাখি, প্রজাপতি এবং হনুমান রয়েছে এখানে।

চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দির —

ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় ১৪ কিমি দূরে চিল্কিগড়ের কনক দুর্গা মন্দির। বর্তমানে যে মন্দিরে পুজো হয় সেটি নতুন। পাশেই রয়েছে পুরোনো মন্দির, যার বয়স প্রায় ৩০০ বছর। শোনা যায় বজ্রপাত হয়ে মন্দিরের মাঝ বরাবর ফাটল ধরে গিয়েছিলো। তারপরেই দেবীর বিগ্রহ সরিয়ে আনা হয় নতুন মন্দিরে। সোনার তৈরী আসল বিগ্রহটি চুরি হয়ে গিয়েছিল একসময়। পরে যে অষ্টধাতুর মূর্তি বসানো হয়েছিলো, সেটাও চুরি হয়েছে একবার৷ সারা বছর পুজো হলেও দুর্গাপুজোর সময় এখানে রীতিমত উৎসব শুরু হয়ে যায়। প্রচুর মানুষের ভিড়ে তখন জমজমাট হয়ে ওঠে মন্দির চত্বর।মন্দিরটি ডুলুং নামে একটি ছোট নদীর পাশে ঘন জঙ্গলে অবস্থিত। বেশ কিছু বিরল প্রজাতির গাছ, পাখি এবং বানর এখানে দেখা যায়। কনক দুর্গার পথে কেন্দুয়া নামে একটি স্থান আছে। শীতকালে পরিযায়ী পাখিরা এই স্থানে আসে।

চিল্কিগড় রাজবাড়ি —

ডুলুং নদী দেখার পর চলে আসুন চিল্কিগড় রাজবাড়িতে। এখানে বর্তমানে একটি সরকারি অফিস আছে। রাজবাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে ভেতরটা জরাজীর্ণ। কিন্তু প্রাচীনত্বের ছাপ থাকার জন্য জায়গাটি পোর্ট্রেট ফোটোগ্রাফির জন্য অসাধারণ। জায়গাটা খুব শান্ত। দুটি প্রাচীন মন্দিরও রয়েছে। সময় নিয়ে এলে সবুজ মাঠের মধ্যে বসে অনেকটা সময় কেটে যাবে। এখান থেকে ফেরার পথে দাঁড়ান ডুলুং নদীর কজওয়ের ওপর। এখানে নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করুন সময় নিয়ে। বর্ষাকালে এই নদীই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। এরপর যেতে পারেন কৃষ গার্ডেন। সাজানো গোছানো একটি পার্ক এটা।

বেলপাহারি  —

সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়ুন বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে। এখানকার দেখার জায়গাগুলো একে অপরের থেকে বেশ দূরে। তাই যত তাড়াতাড়ি বেরোবেন তত বেশি সময় পাবেন। প্রথমেই চলে আসুন ঘাঘরা৷ ঝাড়গ্রাম থেকে ঘাগরার দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার৷ চার দিকে সবুজ শালের সমারোহ৷ বেলপাহাড়ির ঘাগরা জলপ্রপাত। এখানে পাহাড়ের গা বেয়ে জলের ঝরণা রয়েছে একটা। বর্ষাকালে ঝরণার দ্রুতগতিতে পড়া জল পাথরের গায়ে তৈরী করেছে বড় বড় গর্ত। সেই গর্তে বর্ষা পেরোলেও জল ভর্তি হয়ে থাকে। যা দেখতে অনেকটা জল রাখার কলসী বা স্থানীয় ভাষায় ‘ঘাঘরা’ এর মত দেখায়। কাচের মতো পরিষ্কার দেখতে জল।  এখান থেকে চলে আসুন তারাফেণি ব্যারেজ। তারাফেণি নদীর ওপর এটা ছোট্ট একটা জলাধার।

লালজল পাহাড় —

বেলপাহাড়ি থেকে সড়কপথে ২০ কিলোমিটার দূরে লালজল পাহাড়। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চড়াই-উতরাই রাস্তা অতিক্রম করে পাহাড়ি পথে লাল জল পাওয়া যায়। ওই এলাকায় শীতের সময় টাটকা খেজুরের গুড় পাওয়া যায়। পাহাড়ের উপরে উঠলে জঙ্গলের অনেকটাই অংশ দেখা যায়। ছোট্ট পাহাড়ের ওপর রয়েছে আদিম মানুষের গুহা এবং দেবী দুর্গার মন্দির।

কাঁকড়াঝোড় —

তারপর চলে আসুন কাঁকড়াঝোড়। বেলপাহাড়ি থেকে সড়কপথে ২৫ কিলোমিটার কাঁকড়াঝোড়।  কাঁকড়াঝোড় অরণ্য। মনোরম পরিবেশ, রাস্তায় ময়ূরের দেখা মিলতে পারে। আছে আমলাশোল পাহাড়। ভ্রমণপ্রিয়দের জন্য এই জায়গাটি আদর্শ। এখানে রয়েছে বড় পাহাড় ও ঝরণা। এখানে ট্রেকিং করে পাহাড়ের ওপরে উঠতে পারবেন। যদিও এই ট্রেকিং অন্যান্য জায়গার থেকে একটু আলাদা ও কষ্টকর, কিন্তু উঠতে পারলে অসাধারণ ভিউ পাবেন।

খ্যাঁদারানি হ্রদ —

বেলপাহাড়ি থেকে সড়কপথে প্রায় ১১ কিলোমিটার জঙ্গলের পথ ধরে খ্যাঁদারানি হ্রদ। তিনটি পাহাড় ঘেরা মুগ্ধ করা হ্রদ খ্যাঁদারানি। সুবিশাল হ্রদে পরিযায়ী পাখিদের মেলা । দক্ষিণে সুউচ্চ গাড়রাসিণী, পশ্চিমে সিংলহর পাহাড়, মাঝে দিগন্ত বিস্ত্রত জলাশয়ে পাখির ঝাঁক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে চলেছে খ্যাঁদারাণী। পাহাড়ে ঘেরা শান্ত এই হ্রদের সৌন্দর্য্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

গাডরাসিনি পাহাড় —

বেলপাহাড়ি থেকে সড়কপথে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলের মাঝে গাডরাসিণী পাহাড়। অরণ্যে ঘেরা এই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গাডরাসিণী আশ্রম। লাহিড়ী মহারাজ ও স্বামী যোগানন্দের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এই আশ্রম বহু মানুষ তাঁদের আধ্যাতিকতার দর্শন করেন। গাডরাসিণী পাহাড়ে প্রচুর রং-বেরঙের পরিযায়ী পাখি আসে। এখান থেকে ট্রেকিং করে পৌঁছে যেতে পারবেন পাহাড়ের একদম ওপরে। এখানে পাবেন চারিদিকের প্যানোরামিক ভিউ। রয়েছে দুটি মন্দির। এখান থেকে বেরিয়ে চলে আসুন ঢাঙ্গীকুসুম। এখানেও একটু হেঁটে আপনারা পেয়ে যাবেন অসাধারণ একটি ঝরণা। যদিও বর্ষাকাল থেকে পুজোর সময় পর্যন্ত ঝরণাতে বেশি জল থাকে। অন্য সময় একেবারেই শান্ত জলের শব্দ পাবেন। 

হাতিবাড়ি রিসার্ভ ফরেস্ট

ঝাড়গ্রাম থেকে ৪০ কিমি দূরত্বে গোপীবল্লভপুর। দুপাশে ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্যে যেতে যেতে পথের বাঁকে সুবর্ণরেখা নদীর সাথে দেখা হবে। সুবর্ণরেখা নদী এখানে বেশ চওড়া। নদীর ওপর সিধু কানহু ব্রিজ পেরিয়ে এগিয়ে চলুন হতিবারি ফরেস্টের দিকে। একবারে ওড়িশার সীমানায় হাতিবাড়ি ফরেস্ট বাংলো। আর নদীর ওপারে ঝাড়খণ্ড। এখানে ফরেস্ট বাংলোতে থাকার ব্যাবস্থাও আছে। হাতিবাড়িতে সূবর্ণরেখা নদীর অসাধারণ ভিউ পাবেন। নদীর তীরে সময় কাটান। নৌকাবিহার করতে পারেন। যেতে পারেন পাখিরালয়। এখানে ছোট্ট একটা হ্রদ রয়েছে আর তার পাশে একটা পার্ক। যেতে পারেন তপোবন অরণ্য এবং সূবর্ণরেখা ইকো ট্যুরিজম পার্ক। এছাড়া রয়েছে রামেশ্বর মন্দির এবং গুপ্তমণি মন্দির। দেখতে পারেন লোধাশূলি প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। ফেরার পথে যান শালবনির আমলাচটি ভেষজ উদ্যান। বনদফতর থেকে প্রকাশিত একটা বইও পাওয়া যায় এখানে। গোপীবল্লভপুর থেকে সড়কপথে ২২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে ঝিল্লির পাখিরালয়।

কোন সময়ে আসবেন? ?

বিভিন্ন ঋতুতে ঝাড়গ্রাম রূপ পাল্টায় নিজের মত করে। শীতকালে এলে আপনি এখানে ভালো ঠান্ডা পাবেন। দেখার জায়গাগুলো তো থাকবেই, সাথে শহর থেকে একটু বেরোলেই পেয়ে যাবেন আসল খেজুর গুড়ের স্বাদ। ভোরবেলা যেতে পারলে খেজুর রসও খেতে পারবেন। দেখতে পাবেন অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। তবে ঝরণা আর নদীতে জল খুব কম থাকবে। গাছপালা অতটাও সবুজ থাকবে না। কাজেই সেগুলো দেখতে চাইলে অন্য সময়ে আসতে হবে। বসন্তকালে এলে আপনি পাবেন পলাশের রঙে রাঙা পথ, নতুন শালপাতার সবুজ, হালকা ঠান্ডা আর গাঢ় নীল আকাশ। কিন্তু নদী বা ঝরণার জল এই সময়েও পাবেন না। দোলের সময় এলে ঝাড়গ্রামের বসন্ত উৎসবে অংশ নিতে পারবেন। একাধিক জায়গায় বড় আকারে বসন্ত উৎসব পালন হয় এখানে। গ্রীষ্মকালে ঝাড়গ্রাম না আসাই ভালো। প্রচন্ড গরম পড়ে। ইতিপূর্বে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসও ছুঁয়েছে। বর্ষাকালে এলে আপনি পাবেন ঘন সবুজ ঝাড়গ্রামকে। এই সময়টা প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আদর্শ। তীব্রবেগের ঝরণা আর নদীর রূদ্রমূর্তি দেখার সুযোগ এই সময়েই পাবেন। বৃষ্টিভেজা ঝাড়গ্রাম শহরেরও প্রেমে পড়ে যাবেন এলে। কিন্তু যারা বৃষ্টি ভালোবাসেন না, কিন্তু নদী-ঝরণাও দেখতে চান, তাদের জন্য সবথেকে ভালো সময় শরতকাল। পুজোর সময় যদি আসেন, তাহলে আপনারা বর্ষার জলে সদ্য স্নান করা সবুজ ঝাড়গ্রামকে যেমন পাবেন, তেমনি ঝরণার জলও দেখতে পাবেন। নদী তো থাকছেই। তার সাতে পাবেন ঝকঝকে নীল আকাশ।।

যেখানেই যাবেন আপনার পায়ের ছাপ ছাড়া আর কিছু ফেলে আসবেন না।

মেনুতে যাবার জন্য

About Victor

Discovering my self...

4 Comments

  1. Hi, I think your blog might be having browser compatibility
    issues. When I look at your blog site in Firefox,
    it looks fine but when opening in Internet Explorer, it has some overlapping.
    I just wanted to give you a quick heads up! Other then that,
    excellent blog!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *