১। তড়িৎ কি? কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ তড়িৎ বা বিদ্যুৎ হল এক প্রকার শক্তি যা তড়িৎ আধানের স্থিতি বা গতির ফলস্বরূপ সৃষ্টি হয়। বর্তমান মানব সভ্যতা তড়িৎ শক্তির উপর দারুন ভাবে নির্ভরশীল। তড়িৎ দুই প্রকার: স্থির তড়িৎ (Static Electricity) ও প্রবাহী তড়িৎ (Current Electricity) ।
২। স্থির তড়িৎ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে তড়িতের ক্রিয়া উৎপত্তিস্থলেই সীমাবদ্ধ থাকে তাকে স্থির তড়িৎ বলা হয় । ঘর্ষণের ফলে উৎপন্ন হয় বলে একে ঘর্ষণজাত তড়িৎ বলা হয়ে থাকে ।
যেমন – যেমন শুকনো চুলে একটি চিরুনি দিয়ে ঘষলে চিরুনিতে উৎপন্ন স্থির তড়িতের কারণে চিরুনি কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করতে পারে ।
৩। প্রবাহী তড়িৎ কাকে বলে?
উত্তরঃ যে তড়িতের ক্রিয়া উৎপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ নয় অর্থাৎ উৎপত্তিস্থল থেকে দূরবর্তী স্থানে গিয়ে ক্রিয়া করে তাকে প্রবাহী তড়িৎ বা চলতড়িৎ বলে ।
কেমন – আমাদের বাড়িতে যে তড়িতের ব্যবহার আমরা দেখি অর্থাৎ যার সাহায্যে টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান ইত্যাদি চলে সেটি হল প্রবাহী তড়িৎ ।
৪। প্রবাহী তড়িৎ কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে প্রবাহী তড়িৎ দুই প্রকারের হয়। যথা (I) সমপ্রবাহ ( Direct Current বা D.C.) ও (II) পরবর্তী প্রবাহ (Alternating Current বা A.C.) ।
৫। সমপ্রবাহ বা D.C. কাকে বলে?
উত্তরঃ যে তড়িৎ প্রবাহ সব সময় একই দিকে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ যে তড়িৎ প্রবাহের ক্ষেত্রে প্রবাহমাত্রার মান ও প্রবাহের অভিমুখ দুটিই অপরিবর্তিত থাকে তাকে সম প্রবাহ বলে ।
যেমন – বৈদ্যুতিক টর্চের মধ্যে ব্যাটারি থেকে যে তড়িৎ প্রবাহ পাওয়া যায় পাওয়া তা হল সমপ্রবাহ বা D.C. ।
৬। পরবর্তী প্রবাহ বা A.C. কাকে বলে?
উত্তরঃ যে প্রবাহ নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিপরীতমুখী হয় অর্থাৎ যে তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ ও প্রবাহমাত্রার মান পরিবর্তিত হয় তাকে পরবর্তী প্রবাহ (A.C.) বলে ।
৭। তড়িৎ পরিবহনের ভিত্তিতে পদার্থকে কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ তড়িৎ পরিবহনের ভিত্তিতে পদার্থকে মূলত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায় । যেমন – সুপরিবাহী, কুপরিবাহী ও অর্ধপরিবাহী ।
৮। সুপরিবাহী বা পরিবাহী (Conductor) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যেসব – পদার্থের মধ্য দিয়ে সহজেই তড়ি ৎ চলাচল করতে পারে সেইসব পদার্থকে তড়িতের সুপরিবাহী বলা হয় ।
যেমন – বেশিরভাগ ধাতু (লোহা, তামা, সোনা, রুপা, পারদ ইত্যাদি), সংকর ধাতু (ব্রোঞ্জ, কাঁসা প্রভৃতি) তড়িতের সুপরিবাহী । গ্রাফাইট অধাতু হলেও তড়িতের সুপরিবাহী ।
কারণ – এইসব পদার্থের পরমাণুর সবচেয়ে বাইরের কক্ষে ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ বল অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এই ইলেকট্রন গুলি পদার্থের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে । এইসব ইলেকট্রন গুলিকে মুক্ত ইলেকট্রন বলে । পরিবাহীতে মুক্ত ইলেকট্রনগুলি সহজেই তড়িৎ পরিবহন করে ।
৯। কুপরিবাহী বা অপরিবাহী বা অন্তরক (Insulator) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যেসব পদার্থের মধ্য দিয়ে সাধারণ অবস্থায় তড়িৎ সহজে প্রবাহিত হতে পারে না সেইসব পদার্থকে তড়িতের অপরিবাহী বা অন্তরক বা কুপরিবাহী বলে ।
যেমন – বেশিরভাগ অধাতু সাধারণত কুপরিবাহী হয় । শুকনো বায়ু, কাগজ, কাঠ, কাচ, রবার ইত্যাদি হলো তড়িতের কুপরিবাহী ।
কারণ – এইসব পদার্থের পরমাণুর ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের প্রোটন এবং বাইরের কক্ষে ঘুরতে থাকা ইলেকট্রন গুলির মধ্যে প্রবল আকর্ষণ বল থাকায় ইলেকট্রন গুলি মুক্ত অবস্থায় থাকে না । ফলে এইসব ইলেকট্রন গুলো তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না এবং পদার্থগুলোর তড়িৎ পরিবহন ধর্ম দেখা যায় না । প্রকৃতপক্ষে কোন পদার্থই সম্পূর্ণ তড়িৎ অপরিবাহী নয় । এইসব পদার্থের ভিতর দিয়ে তুলনামূলকভাবে খুব কম পরিমাণে তড়িৎ চলাচল করতে পারে বলেই এদের অপরিবাহী বলা হয় ।
১০। অর্ধপরিবাহী (Semi-Conductor) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তরঃ যে সকল পদার্থ সাধারণ তাপমাত্রায় কুপরিবাহী পদার্থের মতো আচরণ করলেও বিশেষ উষ্ণতায় বা বিশেষ অবস্থায় তাদের তড়িৎ পরিবহন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় তাদের অর্ধপরিবাহী বলে ।
যেমন – জার্মেনিয়াম সিলিকন ইত্যাদি অধাতু এবং গ্যালিয়াম আর্সেনাইড, ইন্ডিয়াম সালফাইড ইত্যাদি যৌগ হলো অর্ধপরিবাহী ।
১১। তড়িৎ প্রবাহ কাকে বলে?
উত্তরঃ কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎচালক বলের সাহায্যে পরিবাহীর মুক্ত ইলেকট্রনগুলিকে একটি নির্দিষ্ট দিকে সঞ্চালনকে তড়িৎ প্রবাহ বলে ।
১২। তড়িৎ প্রবাহের কারণ কি?
উত্তরঃ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর মধ্যে যথাক্রমে ইলেকট্রনের ঘাটতি ও ইলেকট্রনের আধিক্য থাকে । এরূপ দুটি বস্তুকে পরিবাহী তার দ্বারা যুক্ত করলে পরিবাহীর মধ্যে থাকা মুক্ত ইলেকট্রনগুলি ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বস্তু দ্বারা বিকর্ষিত এবং ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বস্তু দ্বারা আকর্ষিত হয়ে ধনাত্মক তড়িতাহিত বস্তুতে চলে যায । পরিবাহীর এই ইলেকট্রন গুলির শূন্যস্থান পূরণের জন্য ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্ত বস্তুর অতিরিক্ত ইলেকট্রন গুলি ছুটে আসে । এই কারণেই তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয় । যতক্ষণ না পর্যন্ত বস্তু দুটি তড়িৎ বিভবের মান সমান হয়, ততক্ষণ যাবত এই প্রবাহ চলতে থাকে ।
১৩। তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ কোন দিকে হয়?
উত্তরঃ মুক্ত ইলেকট্রন গুলি যেদিকে প্রবাহিত হয় তার বিপরীত দিকে তড়িৎ প্রবাহ হয় বলে ধরা হয় ।
অর্থাৎ তড়িৎ প্রবাহ ধনাত্মক আধানের গতির অভিমুখে অথবা ঋণাত্মক আধানের গতির বিপরীত অভিমুখে ঘটে । বিভবের ধারণা থেকে বলা যেতে পারে তড়িৎ উচ্চ বিভব থেকে নিম্নবিভবের দিকে প্রবাহিত হয় ।
১৪। তড়িৎ কোশ (Electric cell) কাকে বলে?
উত্তরঃ যে যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক শক্তি বা অন্য শক্তি থেকে তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করে তড়িৎ প্রবাহ বজায় রাখা হয় তাকে তড়িৎ কোশ (Electric cell) বলে ।
যেমন – রাসায়নিক কোশ (Chemical cell), সৌর কোশ (Solar cell), আলোক তড়িৎ কোশ (Photoelectric cell)। সচল যন্ত্রাংশযুক্ত তড়িৎ কোষ হলো ডায়নামো (Dynamo) ইত্যাদি ।
১৫। তড়িৎ কোষ কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ তড়িৎ কোষ মূলত
দুই প্রকার। যথা– (I) প্রাথমিক কোশ বা মৌলিক কোশ (Primary cell) এবং (II) গৌণ কোশ বা সঞ্চয়ী কোশ (Secondary cell) ।
১৬। প্রাথমিক কোশ বা সেল (Cell) কী?
উত্তরঃ যে তড়িৎ কোশ নিজেই নিজের রাসায়নিক শক্তি হতে সরাসরি তড়িৎ শক্তি উৎপন্ন করে তড়িৎ প্রবাহ বজায় রাখে, তাকে প্রাথমিক কোশ বা মৌলিক কোশ (Primary cell) বলে।
যেমন – ভোল্টার কোশ, লেকল্যান্স কোশ, শুষ্ক কোশ ইত্যাদি প্রাথমিক কোশের উদাহরণ।
১৭। গৌণকোশ বা সঞ্চয়ী কোশ (Secondary
cells or storage cells) কাকে বলে ?
উত্তরঃ যে তড়িৎ কোশে বাইরে থেকে তড়িৎ প্রবাহিত করে তড়িৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিরূপে সঞ্চিত করা হয় এবং পরে ওই রাসায়নিক শক্তিকে পুনরায় তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়, তাকে গৌণ কোশ (Secondary cells) বলে । সেকেন্ডারি সেলে বৈদ্যুতিক শক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে জমা থাকে, তাই একে স্টোরেজ সেল (Storage cells) বলা হয়।
যেমন – সীসা–অ্যাসিড ব্যাটারি, লিথিয়াম–আয়ন ব্যাটারি, ম্যাগনেসিয়াম আয়ন ব্যাটারি এবং আরও অন্যান্য ব্যাটারি এই ধরনের কোশের উদাহরণ ।



১৮। প্রাইমারি সেলকে ডিসপোজেবল (dispossable cell) বলে কেন?
উত্তরঃ একটি প্রাথমিক সেল হল একটি ব্যাটারি যা একবার ব্যবহার করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং বিদ্যুতের সাথে রিচার্জ করা যায় না এবং একবার ব্যবহারের পর বাতিল করা হয়, তাই একে ডিসপোজেবল (dispossable cell) বলে ।
এই ডিসপোজেবল ব্যাটারির মধ্যে রয়েছে ওয়াল ঘড়ি, টেলিভিশন রিমোট এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক ডিভাইসে অবস্থিত সাধারণ AA এবং AAA ব্যাটারি। ড্যানিয়েল কোশ, শুষ্ক কোশ এবং বুধ কোশ প্রাথমিক কোষের উদাহরণ।

১৯। নির্জল কোশ বা ড্রাই সেল কী?
উত্তরঃ যে সেল বা বিদ্যুৎ কোশে ইলেকট্রোলাইট হিসেবে ড্রাই বা পেস্ট বা জেলির ন্যায় রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় তাকে ড্রাই সেল বলে। ড্রাই সেল বাস্তবে ড্রাই নয়, কারণ ইলেকট্রোলাইট ড্রাই হলে ড্রাই সেল বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না।
প্রতিটি ড্রাই সেলের তড়িচ্চালক বল ১.৫ ভোল্ট হয়। এ ধরনের সেলের বিদ্যুৎ ক্ষমতা খুব কম হয়ে থাকে।

২০। ড্রাই সেলের ব্যবহার (Use of Drycell) লেখ?
উত্তরঃ যে সকল কাজে ড্রাই সেল ব্যবহার করা হয় তা হল- ইলেকট্রনিক ঘড়িতে, ক্যালকুলেটরে, টর্চ লাইটে, ক্যামেরায়, রিমোটে, রেডিও এবং টেপ রেকর্ডারে, বিভিন্ন পরিমাপক যন্ত্রে, বিভিন্ন খেলনায় ।
২১। বোতাম সেল (Button cell)কী?
উত্তরঃ ইলেকট্রনিক হাতঘড়ি, ক্যালকুলেটর, লেজার টর্চ ইত্যাদি যন্ত্রে ব্যবহৃত সেলগুলি অনেকটা বোতামের মতোই দেখতে হয় এগুলো কি বোতাম সেল বলে ।
২২। তড়িৎ বর্তনী (Electric Circuit) কী?
উত্তরঃ তড়িৎ বর্তনী হল একটি অবিচ্ছিন্ন বাধাহীন পথ যার মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে । তড়িৎ বর্তনী গঠনের জন্য প্রয়োজন একটি তড়িৎ কোশ, একটি সুপরিবাহী ধাতব তার ও একটি অবিচ্ছিন্ন বাধাহীন পথ ।
২৩। তড়িৎ বর্তনী কয় প্রকার ও কী কী?
উত্তরঃ তড়িৎ বর্তনী দুই প্রকার – মুক্ত বর্তনী ও বদ্ধ বর্তনী।
২৪। মুক্ত বর্তনী (Open Circuit) কাকে বলে?
উত্তরঃ যদি কোন তড়িৎ বর্তনীর কোন অংশ বিচ্ছিন্ন করে তড়িৎ প্রবাহ কোনরকম ভাবে ব্যাহত করা হয় তাহলে সেই বর্তনীর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হয় না । এরকম বর্তনীকে মুক্ত বর্তনী বলে ।
২৫। বদ্ধ বর্তনী (Close Circuit) কাকে বলে?
উত্তরঃ যে বর্তনীর মধ্য দিয়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তড়িৎ প্রবাহিত হতে পারে, তড়িৎ প্রবাহে কোনো ব্যাহত হয় না সেই ধরনের বর্তনীকে বদ্ধ বর্তনী বলে ।


২৭। ইলেকট্রিক তার প্লাস্টিকের ভিতর ঢাকা থাকে কেন?
উত্তরঃ ইলেকট্রিক তার তড়িৎ এর সুপরিবাহী ধাতু দিয়ে তৈরি । এর উপর কুপরিবাহী পদার্থ প্লাস্টিকের আবরণ দেওয়া হয় । কারণ তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ হওয়ার সময় অসাবধানতাবশত তারকে স্পর্শ করলে ইলেকট্রিক শক লাগে । ইলেকট্রিক শকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্লাস্টিকের আবরণ দেওয়া হয় ।
২৮। তড়িৎ প্রবাহের চুম্বকীয় ফল কাকে বলে? এর ব্যবহার লেখ ।
উত্তরঃ কোন পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে পরিবাহীর চারপাশে একটি চৌম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি হয় পরিবাহিতারটি নিজে চুম্বকিত হয় না একে তড়িৎ প্রবাহের চুম্বকীয় ফল বলে ।
ব্যবহার – চুম্বকের উপর তড়িৎ প্রবাহের ক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে গ্যালভানোমিটার, অ্যামিটার ভোল্টমিটার প্রভৃতি বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরি করা হয় ।

২৯। তড়িৎ চুম্বকের চুম্বকত্ব কিভাবে বাড়ানো যায়?
উত্তরঃ তড়িৎ চুম্বকের চুম্বকত্ব মূলত তিনটি উপায় বাড়ানো যায় –
(I) তড়িৎবাহী তারের কুন্ডলীর পাক সংখ্যা বাড়িয়ে। (II) তড়িৎ প্রবাহমাত্রা বৃদ্ধি করে । (III) মজা (লোহার পেরেক) হিসেবে উচ্চ ভেদ্যতা সম্পন্ন পদার্থ ব্যবহার করে ।
৩০। তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল কাকে বলে? এর ব্যবহারিক প্রয়োগ লেখ।
উত্তরঃ কোন পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে পরিবাহীটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । এই ঘটনাকে তড়িৎ প্রবাহের তাপীয় ফল বলে ।
ব্যবহার – গিজার, ইলেকট্রিক ইস্ত্রি, ইলেকট্রিক হিটার, ফিউজ বাল্ব ইত্যাদি ।
৩১। পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহের ফলে তাপ কেন উৎপন্ন হয়?
উত্তরঃ পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় পরিবাহীর রোধ তড়িৎ প্রবাহকে বাধা দেয় । এই বাধা অতিক্রম করার জন্য কিছু পরিমাণ শক্তি ব্যায়িত হয় । এই ব্যয়িত শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় । তাই পরিবাহী উত্তপ্ত হয় ।
৩২। LED কী? এর ব্যবহার লেখ।
উত্তরঃ LED (Light Emitting Diode) এক প্রকার ইলেকট্রনিক উপকরণ যা অর্ধপরিবাহী দিয়ে তৈরি এবং সামান্য তড়িৎ শক্তিকেই দৃশ্যমান আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে । এলইডি গালিয়াম আর্সেনাইড, ইন্ডিয়ান ফসফাইড ইত্যাদি অর্ধপরিবাহী উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় ।
ব্যবহার – ইন্ডিকেটর বাতি, ক্যালকুলেটর, ডিজিটাল হাতঘড়ির ডিসপ্লে, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, অ্যালার্ম ঘড়ি, টিভির রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি ব্যবস্থায় বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয় ।
৩৩। সাধারণ বাল্বের তুলনায় LED ব্যবহারের সুবিধা গুলি কী কী?
উত্তরঃ LED ব্যবহারের সুবিধা
(I) কার্যকর ভোল্টেজের মান অত্যন্ত কম, (II) ব্যায়িত বিদ্যুৎ শক্তির মান অত্যন্ত কম, (III) দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা সম্ভব, (IV) দ্রুত ক্রিয়া করতে সক্ষম, (V) উৎপাদন খরচ অতি সামান্য ।
৩৪। ইলেকট্রিক ইস্ত্রি কিভাবে কাজ করে?
উত্তরঃ ইলেকট্রিক ইস্ত্রিতে নাইক্রোম তারের কুণ্ডলীকে দুটি অভ্রপাতের মধ্যে রেখে পাত দুটিকে একটি ত্রিভুজাকার লোহার আবরণের মধ্যে রাখা হয় । নাইক্রোম তারের রোধ খুব বেশি হওয়ায়, এর মধ্যে দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে তারটি খুব উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং লোহার আবরণকে উত্তপ্ত করে । লোহার আবরণের নিচের তল খুব মসৃণ করা হয় এবং যাতে হাতে গরম না লাগে সেই জন্য আবরণের উপরের হাতলটি তাপের কুপরিবাহী পদার্থ দিয়ে আবৃত থাকে । ইস্ত্রিটি উপযুক্ত উষ্ণতায় এনে জামা কাপড় প্রভৃতিকে ইস্ত্রি করা যায় ।
***ইস্ত্রিটিকে শকমুক্ত করার জন্য কুন্ডুলির উপরে ও নিচে অভ্রের পাত দিয়ে কুণ্ডলীটিকে জড়িয়ে রাখা হয় ।
৩৫। ইলেকট্রিক হিটার কিভাবে কাজ করে?
উত্তরঃ ইলেকট্রিক হিটারে একটি নাইট্রোম তারের কুণ্ডলী একটি পোর্সেলিন চাকতির খাঁজে বসানো থাকে । প্লাগের সাহায্যে তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে নাইক্রোম তারটিতে তাপ উৎপন্ন হয় এবং কুন্ডলীটি গরম হয়ে ওঠে । সেই তাপে হিটারের উপর বসানো বস্তু গরম হয় ।
৩৬। বৈদ্যুতিক হিটার, বৈদ্যুতিক ইস্ত্রিতে নাইক্রোম তার ব্যবহারের কারণ কী?
(I) নাইক্রোম তারের রোধ খুব বেশি হওয়ায় অল্প তড়িৎ প্রবাহের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে তাপ উৎপন্ন করতে পারে । (II) নাইক্রোম তারের গলনাঙ্ক অনেক বেশি হওয়ায় উচ্চ উষ্ণতাতেও এটি গলে যায় না ।
৩৭। বৈদ্যুতিক বাল্ব কিভাবে কাজ করে?
উত্তরঃ টাংস্টেন ধাতুর খুবই সরু এবং দীর্ঘ তারকে কুন্ডলী আকৃতির করে বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্ট তৈরি করা হয় । তড়িৎ প্রবাহ পাঠালে ঐ ফিলামেন্টটি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং শ্বেততপ্ত ও ভাস্বর হয়ে আলো বিকিরণ করতে পারে ।
৩৮। বৈদ্যুতিক বাতিতে টাংস্টেনের ফিলামেন্ট ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তরঃ (I) টাংস্টেন ধাতুর খুবই সরু এবং দীর্ঘ তারকে কুন্ডলী আকৃতির করার ফলে রোধ খুব বেশি হয় । ফলে অল্প তড়িৎ প্রবায়েই খুব বেশি তাপ উৎপন্ন হয় । (II) টাংস্টেন ধাতুর গলনাঙ্ক খুব বেশি যাতে সহজে ফিলামেন্টটি গলে না যায় ।
৩৯। বৈদ্যুতিক হিটারের তার বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্ট এর মত আলো বিকিরণ করে না কেন?
উত্তরঃ বৈদ্যুতিক হিটারে অপেক্ষাকৃত মোটা নাইক্রোম তার ব্যবহার করা হয় যার রোধ বৈদ্যুতিক বাল্বে ব্যবহৃত সরু তারের ফিলামেন্টের রোধের তুলনায় কম । ফলে বৈদ্যুতিক হিটারের তার বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্টের মত অত বেশি উত্তপ্ত হয় না । তাই হিটারের তার আলো বিকিরণ করতে পারে না ।
৪০। নাইক্রোম তার কি দিয়ে তৈরি?
উত্তরঃ নাইক্রোম তার নিকেল, ক্রোমিয়াম এবং লোহার সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি ।
৪১। বৈদ্যুতিক ফিউজ কী?
উত্তরঃ বিদ্যুতের মেন লাইনে চিনামাটির ছোট্ট আবরণের মধ্যে টিন (25%) ও সীসার (75%) মিশ্রণে উৎপন্ন সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি কম গলনাঙ্ক বিশিষ্ট, কিন্তু বেশি রোধযুক্ত যে সরু পরিবাহী তার রাখা হয় তাকে ফিউজ বলে ।
৪২। ফিউজ তারের কাজ কী?
উত্তরঃ কোন কারনে মেইন লাইনে বেশি পরিমাণে তড়িৎ প্রবাহিত হওয়ার উপক্রম হলে ফিউজ তার উত্তপ্ত হয়ে গলে যায়, ফলে বর্তনী ছিন্ন হওয়ায় তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ হয় এবং বিদ্যুতের লাইন ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় ।


৪৩। ফিউজ তারের বৈশিষ্ট্য লেখ।
উত্তরঃ (I) ফিউজ তারের গলনাঙ্ক কম হয় । (II) রোধ খুব বেশি হয় ।
৪৪। শর্ট–সার্কিট (Short Circuit) কি?
উত্তরঃ কোন কারণে বিপরীত ধর্মী তড়িৎ এর দুটি লাইনে সরাসরি সংযোগ ঘটলে সমগ্র লাইনের রোধ কমে গিয়ে তড়িৎ প্রবাহের মাত্রা খুব বাড়িয়ে দেয় । এই অবস্থায় লাইনে প্রবল তড়িৎ প্রবাহ চলে । এর ফলে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হয় এবং লাইনে আগুন ধরে যেতে দেখা যায় । একেই শর্ট-সার্কিট বলে ।
৪৫। সোলার প্যানেল কী? এটি কিভাবে কাজ করে?
উত্তরঃ সোলার প্যানেল হল এক ধরনের ফটোভোল্টিক ডিভাইস (সিলিকন জাতীয় অর্ধপরিবাহী দিয়ে তৈরি), যা সূর্যের আলো অর্থাৎ সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে ।
কার্যনীতিঃ
ফটোভোল্টিক কোশগুলি অর্ধপরিবাহী দিয়ে তৈরি হওয়ায় আলোর সংস্পর্শে এলে উত্তেজিত ইলেকট্রন তৈরি করে । ইলেক্ট্রনগুলি একটি সার্কিটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং সরাসরি কারেন্ট (ডিসি) বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, যা বিভিন্ন ডিভাইসকে শক্তি দিতে বা ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে । সৌর প্যানেলগুলি সৌরসেল প্যানেল , সৌর বৈদ্যুতিক প্যানেল বা পিভি মডিউল নামেও পরিচিত ।

