১। পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ কোন পদার্থের এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তনের ঘটনাকে অবস্থার পরিবর্তন বা অবস্থান্তর বলে । পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন অবশ্যই একটি ভৌত পরিবর্তন, রাসায়নিক পরিবর্তন নয় ।
২। গলন (Melting) কাকে বলে?
উত্তরঃ কোন কঠিন পদার্থের তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে গলন বলে । যেমন বরফ তাপ গ্রহণ করে জলে পরিণত হয় ।
৩। কঠিনীভবন (Freezing) কাকে বলে?
উত্তরঃ তাপ নিষ্কাশনের ফলে কোন তরল পদার্থের কঠিনে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কঠিনীভবন বলে । যেমন জল তাপ বর্জন করে কঠিন বরফে পরিণত হয় ।
৪। বাষ্পীভবন (Evaporation) কাকে বলে?
উত্তরঃ তাপ প্রয়োগে কোন তরল পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে বাষ্পীভবন বলে । যেমন জল ফুটে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয় ।
৫। ঘনীভবন (Condensation) কাকে বলে?
উত্তরঃ তাপ নিষ্কাশনের সাহায্যে কোন পদার্থের বাষ্পীয় অবস্থা থেকে তরলের পরিণত হওয়ার ঘটনাকে ঘনীভবন বলে । যেমন বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশির, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতির সৃষ্টি করে ।

৬। গলনাঙ্ক (Melting Point) কাকে বলে?
উত্তরঃ প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে কোন কঠিন পদার্থ যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় গলে তরলে পরিণত হয়, সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রাকে ওই পদার্থের গলনাঙ্ক বলে । যেমন বরফের গলনাঙ্ক 0°C বলতে আমরা বুঝি যে, প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে বরফ 0°C উষ্ণতায় গলে জলে পরিণত হয় ।
৭। হিমাঙ্ক (Freezing Point) কাকে বলে?
উত্তরঃ প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে কোন তরল পদার্থ যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় জমে কঠিনে পরিণত হয়, সেই নির্দিষ্ট উষ্ণতাকে ওই পদার্থের হিমাঙ্ক বলে । যেমন জলের হিমাঙ্ক 0°C বলতে আমরা বুঝি যে, প্রমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে জল 0°C তাপমাত্রায় জমে বরফে পরিণত হয় ।
৮। কোন পদার্থের গলনাঙ্ক হিমাঙ্কের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তরঃ (I) কঠিন অবস্থায় যেসব পদার্থ কেলাসাকার একই চাপে তাদের গলনাঙ্ক ও হিমাঙ্ক সমান হয় । (II) যেসব পদার্থ অকেলাসাকার তাদের নির্দিষ্ট কোন গলনাঙ্ক এবং হিমাঙ্ক নেই ।
৯। মাখন, মোম, চর্বি, কাচ প্রভৃতি অয়নিতাকার পদার্থের গলনাঙ্ক হিমাঙ্ক নির্দিষ্ট নয় কেন?
উত্তরঃ মাখন, মোম, চর্বি, কাচ প্রভৃতি পদার্থ কে উত্তপ্ত করলে ওইসব অকেলাসিত পদার্থ গুলি প্রথমে সান্দ্র অবস্থায় আসে । এটি পদার্থের না কঠিন না তরল অবস্থা । এই অবস্থায় আসার ফলে অনিয়তাকার পদার্থের গলন বা কঠিনী ভবন ঠিক কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ঘটেছে তা জানা যায় না । তাই ওইসব পদার্থের নির্দিষ্ট কোন গলনাঙ্ক বা হিমাঙ্ক পাওয়া সম্ভব নয় । যেমন মাখন 28°C থেকে 37°C উষ্ণতার মধ্যে গলে যায় ।
১০। উদ্বায়ী কঠিন পদার্থ কাকে বলে?
উত্তরঃ যেসব কঠিন পদার্থে তাপ দিলে পদার্থ গুলি তরলের রূপান্তরিত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয় তাদের উদ্বায়ী কঠিন পদার্থ বলে । যেমন – ন্যাপথালিন, আয়োডিন, কর্পূর ইত্যাদি ।
১১। গলন ও কঠিনই ভাবনে পদার্থের আয়তনের কি পরিবর্তন ঘটে?
উত্তরঃ সাধারণত গলনে পদার্থের আয়তন বাড়ে এবং কঠিনীভবনে পদার্থের আয়তন কমে । কিন্তু বরফ ঢালাই লোহা, পিতল, অ্যান্টিমনি, বিসমাথ প্রভৃতি কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হলে আয়তনে কমে যায় । যেমন- 0°C উষ্ণতার 12 সিসি বরফ গলে 0°C উষ্ণতার 11 সিসি জল উৎপন্ন করে । আবার এইসব পদার্থ গুলি তরল থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তনে বেড়ে যায় । যেমন- যেমন- 0°C উষ্ণতার 110 সিসি জল জমে 0°C উষ্ণতার 120 সিসি বরফ উৎপন্ন করে ।
১২। জল বরফে পরিণত হলে এই ঘটনার সুবিধা ও অসুবিধা লেখো ।
উত্তরঃ সুবিধা – শীতপ্রধান দেশে যখন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা 0°C -এর নিচে নেমে যায় তখন জলাশয়ের জল প্রথমে 4°C উষ্ণতায় পৌঁছায় । কারণ ওই উষ্ণতায় জলের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি । পরে জলাশয়ের উপরিতলের জল আরো ঠান্ডা হয়ে বরফে পরিণত হয় । জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে, ফলে বরফের ঘনত্ব 4°C উষ্ণতায় জলের ঘনত্ব থেকে কম হয় । তখনই বরফ জলাশয়ের উপর ভেসে থাকে, নিচে নামে না । বরফ তাপের কুপরিবাহী । তাই বরফের নিচের জল সহজে ঠান্ডা হতে পারে না । ফলে বরফ আবৃত জলাশয়ের নিচে জল তরল অবস্থায় থাকে এবং বরফের নিচের জলে জলাশয়ের উদ্ভিদ ও প্রাণীরা বেঁচে থাকতে পারে ।
অসুবিধা – (i) শীতপ্রধান দেশে শীতকালে অনেক সময় জলের পাইপে জল জমে বরফ হয়ে যায়, জল জমে বরফ হওয়ার সময় আয়তনে বেড়ে যায়, ফলে পাইপের ভিতরে প্রচন্ড চাপে পাইপ ফেটে যায় । (ii) শীতকালে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা 0°C -এর কম হলে মোটর গাড়ি রেডিয়েটরের জল বরফে পরিণত হয়ে আয়তনে বাড়ে । ফলে মোটর গাড়ি রেডিয়েটরের নল ফেটে যায় । (iii) একই কারণে শ্রীপ্রধান অঞ্চলে পাথরের মাঝখানে থাকা জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে বেড়ে যায । এতে অনেক সময় পাথর ফেটে গিয়ে পাহাড়ে ধস নামে ।
১৩। পিতলকে ঢালাই এর কাজে ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তরঃ পিতল তরল থেকে কঠিনে পরিণত হলে আয়তনে বাড়ে । এতে ঢালাইয়ের কাজে বিশেষ সুবিধা হয় । ঢালাই করার সময় ছাঁচের মধ্যে গলিত পিতলকে ঢেলে দেওয়া হয় । গলিত পিতল জমে কঠিনে পরিণত হলে আয়তনে বেড়ে ছাঁচটিকে সম্পূর্ণভাবে এঁটে ধরে । যার ফলে ঢালাইয়ের ঢালাই গুলি সূক্ষ্ম হয় এবং ছাঁচের আকার পায় ।
১৪। পদার্থের গলনাঙ্ক কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
উত্তরঃ কোন কঠিন পদার্থের গলনাঙ্ক দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে – (I) পদার্থের উপর প্রযুক্ত চাপ এবং (II) পদার্থটিতে অপদ্রব্যের উপস্থিতি ।
১৫। গলনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাব আলোচনা কর।
উত্তরঃ (I) যেসব কঠিন পদার্থ তরলের পরিণত হলে আয়তনে বেড়ে যায়, সেই সব কঠিন পদার্থের উপর চাপ বাড়ালে পদার্থের গলনাঙ্ক বেড়ে যায় । কারণ চাপ বাড়ালে পদার্থ গুলির আয়তন বৃদ্ধি পায় ফলে এদের গলনাঙ্ক বেড়ে যায় । সোনা, রুপা, তামা ইত্যাদি এই জাতীয় পদার্থ ।
(II) যেসব কঠিন পদার্থ তরলের পরিণত হলে আয়তনে কমে যায় সেইসব পদার্থের উপর চাপ বাড়ালে পদার্থ গুলোর গলনাঙ্ক কমে যায় । কারণ চাপ বাড়ালে পদার্থ গুলির আয়তন সংকোচন হয় ফলে এদের গলনাঙ্ক কমে যায় । বরফ, পিতল, ঢালাই লোহা, অ্যান্টিমনি প্রভৃতি এই জাতীয় পদার্থ ।
১৬। দুই টুকরো বরফকে একসঙ্গে কিছুক্ষণ চেপে রাখলে জোড়া লেগে যায় কেন?
উত্তরঃ দুই টুকরো বরফকে একসঙ্গে কিছুক্ষণ জোরে চেপে রাখলে ওদের স্পর্শতলের বরফের গলনাঙ্ক 0°C -এর নিচে নেমে যায় । তখন ওই স্থানের বরফ গলে জলে পরিণত হয় । এই অবস্থায় চাপ সরিয়ে নিলে গলনাঙ্ক আবার বেড়ে 0°C -এ পৌঁছায় । বরফ গলা জল পুনরায় বরফে পরিণত হয়, ফলে বরফের টুকরো দুটি জোড়া লেগে যায় ।
১৭। বৈদ্যুতিক লাইনে যে ফিউজ তার ব্যবহার করা হয় তার গলনাঙ্ক কম হওয়া উচিত কেন?
উত্তরঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত তড়িৎ প্রবাহ হলে তার উত্তপ্ত হয়ে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে । ফিউজ তারের গলনাঙ্ক কম হওয়ায় ওই তার অল্প উত্তাপেই গলে যায় ও তড়িৎ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় । ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো যায় ।
১৮। গলনাঙ্কের উপর অপদ্রব্যের প্রভাব আলোচনা কর ।
উত্তরঃ কঠিন পদার্থে অপদ্রব্য মেশানো থাকলে ওই মিশ্রিত পদার্থের গলনাঙ্ক বিশুদ্ধ পদার্থের স্বাভাবিক গলনাঙ্ক থেকে কম হয় । যেমন- ঝালাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ধাতু শংকরের গলনাঙ্ক উপাদান ধাতু গুলির গলনাঙ্কের চেয়ে কম । ঝালাই করতে সীসা ও টিনের ধাতু সংকর ব্যবহার করা হয় । ওই ধাতু সংকরের গলনাঙ্ক 180°C । কিন্তু সিসা ও টিনের গলনাঙ্ক যথাক্রমে 327°C ও 232°C ।
১৯। হিমমিশ্র কাকে বলে? উদাহরণ দাও। এর ব্যবহার লেখো ।
উত্তরঃ মিশ্র পদার্থের গলনাঙ্ক বিশুদ্ধ পদার্থের গলনাঙ্কের তুলনায় কম হয় । যেসব মিশ্রণের সাহায্যে মূল পদার্থের গলনাঙ্কের চেয়ে অনেক কম উষ্ণতা সৃষ্টি করা যায় সেসব মিশ্রণকে হিমমিশ্র বলে ।
উদাহরণ: তিন ভাগ ওজনের বরফের সঙ্গে এক ভাগ ওজনের সাধারণ লবণ মিশিয়ে যে হিমমিশ্র পাওয়া যায় তার উষ্ণতা -23°C হয় ।
ব্যবহার: মাছ-মাংস সংরক্ষণে এবং আইসক্রিম, কুলপি, বরফ প্রভৃতি তৈরি করতে হিমমিশ্র ব্যবহার করা হয় ।
২০। দ্রবণের হিমাঙ্কের উপর অপদ্রব্যের প্রভাব আলোচনা কর ।
উত্তরঃ কোন পদার্থকে তরলের দ্রবীভূত করলে দ্রবণের হিমাঙ্ক বিশুদ্ধ তরলের হিমাঙ্ক থেকে কম হয় । প্রমাণ চাপে জলের হিমাঙ্ক 0°C । কিন্তু জলে সাধারণ লবণ দ্রবীভূত করলে লবণ জলের হিমাঙ্ক 0°C অপেক্ষা কম হয় । ফলে ওই দ্রবণকে 0°C উষ্ণতার নিচে না নিয়ে গেলে জল জমে বরফে পরিণত হয় না ।
একই কারণে শীতপ্রধান দেশে মোটর গাড়ির রেডিয়েটড়ের জল যাতে জমতে না পারে, সেই জলের সঙ্গে গ্লাইকল বা গ্লিসারোল মিশিয়ে দেওয়া হয় ।
২১। বাষ্পীভবন কোন কোন পদ্ধতিতে হতে পারে?
উত্তরঃ তরলের বাষ্পীভবন দুটি প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে – স্ফুটন ও বাষ্পায়ন ।
২২। স্ফুটন (Boiling) কাকে বলে?
উত্তরঃ একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তরলের সকল স্থান থেকে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে স্ফুটন বলে । যেমন প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে 100°C উষ্ণতা বিশুদ্ধ জলের স্ফুটন শুরু হয় ।
২৩। স্ফুটনাঙ্ক (Boiling point) কাকে বলে?
উত্তরঃ প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন তরলের স্ফুটন আরম্ভ হয় সেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রাকে ওই তরলের স্ফুটনাঙ্ক বলে । বিশুদ্ধ জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C । মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ না পর্যন্ত সম্পূর্ণ তরল বাষ্পে পরিণত হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তরলের উষ্ণতার কোন পরিবর্তন ঘটে না ।
২৪। তরলের স্ফুটনাঙ্ক কোন কোন বিষয়ের উপর কি কি ভাবে নির্ভর করে?
উত্তরঃ তরলের স্ফুটনাঙ্ক নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে ।
(I) তরলের উপরিতলে প্রযুক্ত চাপ – তরলের উপর চাপ বাড়লে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বাড়ে এবং চাপ কমালে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কমে।
(II) তরলে অপদ্রব্যের উপস্থিতি – বিশুদ্ধ তরলে অন্য কোন অপদ্রব্য দ্রবীভূত থাকলে তরলের স্ফুটনাঙ্ক বেড়ে যায় ।
(III) তরল পদার্থের প্রকৃতি – বিভিন্ন তরলের স্ফুটনাঙ্ক বিভিন্ন । যেমন জলের স্ফুটনাঙ্ক 100°C, ইথারের স্ফুটনাঙ্ক 35°C, তরল অক্সিজেনের স্ফুটনাঙ্ক -183°C ।
(IV) স্ফুটন পাত্রের উপাদানের উপরেও তরলের স্ফুটনাঙ্ক নির্ভর করে, তবে তার প্রভাব বেশি হয় না ।
২৫। রান্নার সময় পাত্রের মুখ ঢাকনা দিয়ে ঢাকা দিয়ে রান্না করা হয় কেন?
উত্তরঃ পাত্রের মুখে ঢাকা দিলে উৎপন্ন জলীয়বাষ্প পাত্র থেকে বের হতে পারে না । ফলে পাত্রের মধ্যে জলীয় বাষ্প যত বেশি জমা হতে থাকবে জলীয় বাষ্পের চাপ তত বাড়তে থাকবে । চাপ বাড়লে জলের স্ফুটনাঙ্ক বাড়তে থাকবে, ফলে জল তার স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্কের চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় ফুটবে । তাই খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হবে । একই কারণে খাদ্যদ্রব্য তাড়াতাড়ি সেদ্ধ করতে প্রেসার কুকার ব্যবহার করা হয় ।
২৬। পাহাড়ের উপর রান্না করতে বেশি সময় লাগে কেন?
উত্তরঃ পাহাড়ের উপরে উচ্চতার জন্য বায়ুর চাপ কমে যায় । তাই পাহাড়ের উপরে জলের স্ফুটনাঙ্ক কমে যায় অর্থাৎ জল 100°C -এর কম উষ্ণতায় ফুটতে শুরু করে । সেজন্য খাদ্যদ্রব্য সেদ্ধ করতে অর্থাৎ রান্না করতে বেশি সময় লাগে ।
একই রকম প্রশ্ন – কলকাতা অপেক্ষা দার্জিলিং এর জল কম উষ্ণতায় ফোটে কেন? খনির মধ্যে জল কম না বেশি উষ্ণতায় ফুটবে?
২৭। প্রেসার কুকারের কার্যপ্রণালী লেখ ।
উত্তরঃ প্রেসার কুকারের মূল পাত্রের মধ্যে জল ও অন্যান্য খাদ্যবস্তুকে রেখে কুকারের মুখ ঢাকনা দিয়ে বায়ুনিরুদ্ধভাবে বন্ধ করা হয় । এই অবস্থায় কুকারটিকে জ্বলন্ত উনানের উপর বসালে পাত্রের মধ্যে জলীয়বাষ্প জমা হতে থাকে । ফলে পাত্রের অভ্যন্তরে বাষ্পের চাপ ক্রমশ বেড়ে বায়ুমন্ডলীয় চাপের থেকে বেশি হয় এবং পাত্রের জল প্রায় 120°C উষ্ণতায় ফুটতে আরম্ভ করে। ওই উষ্ণতায় প্রেসার কুকারের ভেতরের খাদ্যবস্তু অতি সহজেই এবং কম সময়ে সেদ্ধ হয় ।
২৮। বাষ্পায়ন (Evaporation) কাকে বলে?
উত্তরঃ যেকোনো উষ্ণতায়, কোন তরলের উপরিতল থেকে ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পায়ন বলে। বাষ্পায়নের জন্য কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতার দরকার হয় না, বাষ্পায়ন কম-বেশি সব উষ্ণতাতেই হতে পারে ।
২৯। উদ্বায়ী তরল পদার্থ কাকে বলে?
উত্তরঃ যেসব তরল পদার্থ সাধারণ তাপমাত্রাতেই বাষ্পে পরিণত হয়ে যায় অর্থাৎ যেসব তরল পদার্থের বাষ্পায়নের হার অপেক্ষাকৃত বেশি তাদের উদ্বায়ী তরল পদার্থ বলে । যেমন স্পিরিট, ইথার, পেট্রোল, কেরোসিন, ক্লোরোফর্ম ইত্যাদি ।
৩০। বাষ্পায়নের হার কোন কোন বিষয়ের উপর কিভাবে নির্ভর করে?
উত্তরঃ বাষ্পায়নের হার নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে-
(I) তরলের উষ্ণতাঃ তরলের উষ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়নের হার বাড়ে তরলের উষ্ণতা তরলের স্ফুটনাঙ্কের যত কাছাকাছি হয় তরলের বাষ্পায়ন তত দ্রুত হয়।
যেমন- একখানা ভেজা কাপড় রোদে মেলে দিলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় কিন্তু কাপড়টি ছায়ায় মেললে শুকোতে বেশি সময় লাগে ।
(II) তরল সংলগ্ন বায়ু উষ্ণতাঃ তরল সংলগ্ন বায়ুর উষ্ণতা যত বেশি হয় বাষ্পায়ন ও তত দ্রুত হয় । যেমন- গরমকালে বায়ুর উষ্ণতা বেশি থাকায় পুকুর, ডোবা, বিল প্রভৃতি জলাশয়ের জল শুকিয়ে যায় ।
(III) তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফলঃ বাষ্পায়ন কেবলমাত্র তরলের ওপরিতল থেকে ঘটে, ফলে তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফল বেশি হলে বাষ্পায়নের হার দ্রুত হয় ।
যেমন- গরম চা কাপ থেকে ডিশে ঢাললে তরলের উপরিতলের ক্ষেত্রফল বাড়ে। ফলে বাষ্পায়ন দ্রুত হয় এবং চা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়।
(IV) তরলের স্ফুটনাঙ্কঃ দুটি তরলের মধ্যে যে তরলের স্ফুটনাঙ্ক কম, সেটি অপরটি অপেক্ষা দ্রুত বাষ্পীভূত হয় ।
যেমন- একই চাপ উষ্ণতায় বেঞ্জিন (স্ফুটনাঙ্ক 80°C) এবং গ্লিসারিন (স্ফুটনাঙ্ক 290°C) এর মধ্যে বেঞ্জিনের বাষ্পায়ন দ্রুততর হয় ।
(V) বায়ুর শুষ্কতাঃ বায়ু যত শুষ্ক হয় অর্থাৎ বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যত কম থাকে বাষ্পায়ন তত দ্রুত হয় ।
যেমন বর্ষাকালের বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় ভিজে কাপড় শুকাতে বেশি সময় লাগে কারণ বর্ষাকালে বাষ্পায়ন ধীরে ধীরে হয়।কিন্তু শীতকালের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে ফলে শীতকালে ভেজা কাপড় তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় ।
(VI) বায়ু প্রবাহঃ তরলের উপর বায়ুপ্রবাহ বাড়ালে বাষ্পায়নের হারবারে কারণ বায়ুপ্রবাহ তরলের উপরের বাষ্পকে সরিয়ে দেয় ।
যেমন পাখার হাওয়ায় গায়ের ঘাম তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় ।
(VII) তরলের উপর চাপঃ তরলের উপর বায়ুমন্ডলের চাপ যত কমে বাষ্পায়নের হার তত বাড়ে ।
যেমন পাহাড়ের পাহাড়ের উপর বায়ুর চাপ কম বলে ওই স্থানে বাষ্পায়নের হার বেশি । পক্ষান্তরে খনি গর্ভে বাষ্পায়নের হার কম ।
৩১। আগুনে জল ঢাললে আগুন নিভে যায় কেন?
উত্তরঃ আগুনে জল ঢাললে জ্বলন্ত বস্তু থেকে জল তাপ গ্রহণ করে জলীয় বাষ্পে পরিণত হতে থাকে, ফলে জ্বলন্ত বস্তুর তাপ ক্রমশ কমে আসে । আবার উৎপন্ন জলীয় বাষ্প জ্বলন্ত বস্তুর উপর একটি আবরণ সৃষ্টি করে । ফলে বাইরের বায়ু সহজে জ্বলন্ত বস্তুটির সংস্পর্শে আসতে পারে না । তখন অক্সিজেনের অভাবে বস্তুটির জ্বলন আর সম্ভব হয় না এবং জ্বলন্ত বস্তুর আগুন নিভে যায় ।
৩২। বাষ্পায়ন ও স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।
উত্তরঃ
বাষ্পায়ন | স্ফুটন |
(i) বাষ্পায়ন সব উষ্ণতায় ঘটে । | (i) প্রমাণ চাপে স্ফুটন একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ঘটে । |
(ii) উষ্ণতা বাড়লে বাষ্পায়নের হার বাড়ে । | (ii) স্ফুটনের সময় তরলের উষ্ণতা স্থির থাকে । |
(iii) বাষ্পায়ন কেবলমাত্র তরলের ওপরিতল থেকে হয় | (iii) স্ফুটন তরলের সব স্থান থেকে একই সময়ে ঘটে । |
(iv) বাষ্পায়নের ফলে তরলের উষ্ণতা কমে । | (iv) স্ফুটনের সময় তরলে উষ্ণতা স্থির থাকে । |
(v) বাষ্পায়ন ধীরে ধীরে হয় । | (v) স্ফুটন দ্রুত গতিতে হয় । |
(vi) বাষ্পায়ন নিঃশব্দে হয় শব্দ হয় । | (vi) স্ফুটন সশব্দে হয় । |
(vii) বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপের মান তরলের উষ্ণতার উপর নির্ভর করে । | (vii) নির্দিষ্ট তরলের স্ফুটনের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপের মান নির্দিষ্ট । |
৩৩। স্টিম বর্ণহীন হলেও ফুটন্ত জলের কেটলির মুখ থেকে নির্গত স্টিম সাদা দেখায় কেন?
উত্তরঃ কেটলির ভিতরে তাপমাত্রার চেয়ে কেটলির বাইরের তাপমাত্রা অনেক কম । ফলে কেটলির মুখ থেকে নির্গত স্টিম বাইরে ঠান্ডা বাতাসে সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয় এবং ছোট ছোট জলকণায় পরিণত হয়ে বাতাসে ভাসতে থাকে । স্টিমের সঙ্গে ভাসতে থাকা ওই জলকণার উপর আলো পড়লে স্টিমকে কুয়াশার মতো সাদা দেখায় ।
৩৪। সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প (Saturated and unsaturated vapour) কাকে বলে?
উত্তরঃ কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো স্থানের নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে সর্বাধিক যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকতে পারে, সেই পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকলে সেই বাষ্পকে সম্পৃক্ত বাষ্প বলে ।
কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন স্থানের নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে সর্বাধিক যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকতে পারে, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ তার থেকে কম হলে ওই বাষ্পকে অসম্পৃক্ত বাষ্প বলে ।
৩৫। শিশিরাঙ্ক (Dew point) কাকে বলে?
উত্তরঃ যে উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ু জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়, সেই উষ্ণতাকে ওই বায়ুর শিশিরাঙ্ক বলে ।
৩৬। শিশির কিভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ দিনের উষ্ণতা অপেক্ষাকৃত বেশি থাকায় বায়ুতে জলীয় বাষ্প ও অসম্পৃক্ত অবস্থায় থাকে । কিন্তু রাতে ভূ-পৃষ্ঠ এবং ভূ-পৃষ্ঠের উপরের বস্তু ক্রমশ তাপ ছেড়ে ঠান্ডা হতে থাকে । এই অবস্থায় বায়ুর উষ্ণতা যখন শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে যায় তখন বায়ুর জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণার আকারে ঘাস, পাতা প্রভৃতির উপর জমা হয় । একে শিশির বলে । শীতকালে সকালে ঘাসের উপর শিশির জমে থাকতে দেখা যায় ।
৩৭। উঁচু গাছ পালার চেয়ে ঘাসের উপর শিশির বেশি জমে কেন?
উত্তরঃ রাতে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা যত কমতে থাকে ততই ভূ-পৃষ্ঠের উপরের বায়ুর জলীয় বাষ্প ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে ভারী হয় এবং ভূ-পৃষ্ঠের দিকে নেমে আসে । তখন পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে উষ্ণ হালকা বায়ু ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে প্রবাহিত হয় । এই পরিচলন স্রোতের দরুন উপরের বায়ুর উষ্ণতা সহজে শিশিরাঙ্কের নিচে নামে না । ফলে উঁচু গাছ পালায় শিশির কম জমে । কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুস্তরটি বেশিক্ষণ ধরে ভূপৃষ্ঠের শীতল বস্তুর সংস্পর্শে থাকার সুযোগ পায় । ফলে ওই বায়ুস্তরের উষ্ণতা দ্রুত শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে আসে এবং শিশির পড়তে শুরু করে । যে কারণে ঘাসের উপর বেশি শিশির জমতে দেখা যায় ।
৩৮। ভালোভাবে শিশির জমার শর্ত গুলি লেখ ।
উত্তরঃ (i) মেঘহীন আকাশ: রাতে আকাশ পরিস্কার থাকলে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয় । ফলে আকাশ মেঘমুক্ত হলে বেশি শিশির জমতে দেখা যায় । (ii) বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ: বায়ুতে জলীয় বাষ্পর পরিমাণ বেশি থাকলে বায়ু ওই জলীয় বাষ্প দ্বারা তাড়াতাড়ি সম্পৃক্ত হয় । ফলে দ্রুত শিশির জমে । (iii) কম বায়ুপ্রবাহ: বায়ু চলাচল কম হলে বায়ু কোন শীতল বস্তুর সংস্পর্শে বেশিক্ষণ ধরে থাকতে পারে । ফলে বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নিচে নামার সম্ভাবনা বাড়ে । তাই বায়ুপ্রবাহ কম হলে শিশির বেশি জমে । (iv) তাপের ভালো বিকিরক ও কুপরিবাহী বস্তুর উপস্থিতি: যেসব পদার্থ তাপের ভালো বিকিরক এবং তাপের কুপরিবাহী তাদের উপর তাড়াতাড়ি শিশির জমে । কারণ ওইসব পদার্থ সহজে তাপ বর্জন করে শীতল হয় এবং কাছের বায়ুস্তরকে দ্রুত শিশিরাঙ্কের নিচে পৌঁছাতে সাহায্য করে ।
৩৯। কুয়াশা কিভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা সৃষ্টি করে । বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা যদি কোন কারণে কমে শিশিরঙ্কের নিচে নেমে যায়, তবে বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় । ভূ পৃষ্ঠের কাছাকাছি জলকণাগুলি শিশিরে রূপান্তরিত হয় এবং ঘনীভূত অপর জলকণাগুলি বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা, কয়লার গুঁড়ো প্রভৃতিকে অবলম্বন করে বায়ুতে ভেসে বেড়ায় । এরূপ ভাসমান জলকণাকে কুয়াশা বলে।
বায়ুর জলীয় বাষ্পের ধ্বনিভবন ছাড়া আর্দ্রভূমির উচ্চ উষ্ণতা কুয়াশা সৃষ্টির অন্যতম কারণ । আর্দ্রভূমি থেকে ওঠা জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা উৎপন্ন করে । শিল্পাঞ্চলের বায়ুতে অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে কয়লার গুঁড়ো ও ধূলিকণা থাকে । তাই ওইসব অঞ্চলে ঘন কুয়াশা জমতে দেখা যায় ।
৪০। ধোঁয়াশা কি?
উত্তরঃ বড় বড় শহরাঞ্চলে ধোঁয়া ও কুয়াশা মিলে যে ঘন আবরণ গড়ে তোলে তাকে ধোঁয়াশা বলে ।
৪১। মেঘ কিভাবে সৃষ্টি হয়?
আদ্র বায়ু শুষ্ক বায়ু থেকে হালকা বলে তা সহজে উপরে উঠে যায় । এই বায়ুর জলীয় বাষ্প উপরে উঠে শীতল বায়ুস্তরের সংস্পর্শে এসে ঘনীভূত হয় এবং ক্ষুদ্রাকৃতি জলকণার সৃষ্টি করে । ওই জল কণাগুলো যখন বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণার উপর জমে ভেসে বেড়ায় তখন একে আমরা মেঘ বলি ।
৪২। বৃষ্টি কিভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তরঃ মেঘের জল বিন্দুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আকারে বড় ভারী হয় । তখন ওই সব জলবিন্দু আর বায়ু মাধ্যমে ভেসে থাকতে পারে না । অভিকর্ষের টানে ভূ-পৃষ্ঠের অভিমুখে নামতে থাকে । এই জল বিন্দুগুলি নিচে নেমে আসার সময় আরও জলকণার সঙ্গে মিশে জলধারার আকারে ভূ-পৃষ্ঠে পড়তে থাকে । একেই আমরা বৃষ্টি বলি ।
৪৩। শিলা বৃষ্টি কি?
উত্তরঃ বৃষ্টির ফোটাগুলি মাটির দিকে নামার সময় খুব ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে যদি শীতল হয়ে পড়ে, তবে বৃষ্টির ওই ফোঁটা গুলি বরফের টুকরোয় পরিণত হয় । তখন বৃষ্টিধারার সঙ্গে ওই বরফ টুকরোগুলি ভূ-পৃষ্ঠে পড়তে থাকে একে শিলা বৃষ্টি বলে ।
৪৩। লীন তাপ (Latent heat) কাকে বলে?
উত্তরঃ উষ্ণতা অপরিবর্তিত রেখে একক ভরের কোন পদার্থের শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ বা নিষ্কাশন করতে হয়, সেই পরিমাণ তাপকে ওই পদার্থের ওই অবস্থান্তরের লীন তাপ বলে ।
৪৪। লীন তাপ কয় প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ পদার্থের বিভিন্ন অবস্থান্তর অনুযায়ী লীন তাপ চার রকম হয়- (i) গলনের লীন তাপ, (ii) কঠিনীভবনের লীন তাপ, (iii) বাষ্পীভবনের লীন তাপ এবং (iv) ঘনীভবনের লীন তাপ ।
৪৪। গলনের লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তরঃ প্রমাণ চাপে একক ভরের কোন কঠিন পদার্থকে তার গলনাঙ্ক উষ্ণতায় স্থির রেখে তরলে পরিণত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ করতে হয় তাকে ওই কঠিন পদার্থের গলনের লীন তাপ বলে । যেমন CGS পদ্ধতিতে বরফের গলনের লীন তাপ 80 ক্যালরি/গ্রাম ।
৪৫। কঠিনীভবনের লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তরঃ প্রমাণ চাপে একক ভরের কোন তরল পদার্থকে তার হিমাঙ্ক উষ্ণতার স্থির রেখে কঠিনে পরিণত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয়, তাকে ওই তরলের কঠিনীভবনের লীন তাপ বলে । যেমন CGS পদ্ধতিতে জলের কঠিনীভবনের লীন তাপ 80 ক্যালরি/গ্রাম ।
৪৬। বাষ্পীভবনের লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তরঃ প্রমাণ চাপে একক ভরের কোন তরলকে তার স্ফুটনাঙ্ক উষ্ণতা স্থির রেখে বাষ্পে পরিণত করতে যে পরিমাণ তাপ প্রয়োগ করতে হয়, তাকে ওই তরলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ বলে । যেমন CGS পদ্ধতিতে জলের বাষ্পীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালরি/গ্রাম ।
৪৭। ঘনীভবনের লীন তাপ কাকে বলে?
উত্তরঃ প্রমাণ চাপে একক ভরের কোন গ্যাসীয় পদার্থকে তার স্ফুটনাঙ্ক উষ্ণতায় স্থির রেখে তরলের পরিণত করতে যে পরিমাণ তাপ নিষ্কাশন করতে হয়, তাকে ওই গ্যাসীয় পদার্থের ঘনীভবনের লীন তাপ বলে । যেমন CGS পদ্ধতিতে জলীয় বাষ্পের ঘনীভবনের লীন তাপ 537 ক্যালরি/গ্রাম ।
৪৮। বরফের গলনের লীন তাপ 80 ক্যালরি/গ্রাম বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ বরফের গলনের লীন তাপ 80 ক্যালরি/গ্রাম বলতে বোঝায় যে 0°C উষ্ণতায় এক গ্রাম বরফকে 0°C উষ্ণতার এক গ্রাম জলে পরিণত করতে 80 ক্যালরি তাপ প্রয়োজন ।
৪৯। ষ্টিমের লীন তাপ 537 ক্যালরি/গ্রাম বলতে কী বোঝায়?
উত্তরঃ ষ্টিমের লীন তাপ 537 ক্যালরি/গ্রাম বলতে বোঝায় যে 100°C উষ্ণতার এক গ্রাম জলকে 100°C এক গ্রাম ষ্টীমে পরিণত করতে 537 ক্যালরি তাপের প্রয়োজন ।
৫০। 0°C উষ্ণতার জল অপেক্ষা 0°C উষ্ণতার বড় বেশি ঠান্ডা বোধ হয় কেন?
উত্তরঃ বরফের গলনের লীন তাপ 80 ক্যালরি/গ্রাম । ফলে 0°C উষ্ণতার প্রতি গ্রাম বরফে, 0°C উষ্ণতার প্রতি গ্রাম জল অপেক্ষা 80 ক্যালরি তাপ কম থাকে । তাই °C উষ্ণতার জল অপেক্ষা 0°C উষ্ণতার বড় বেশি ঠান্ডা বোধ হয় ।
৫১। 100°C উষ্ণতার ফুটন্ত জল এবং 100°C উষ্ণতার স্টিমে হাত দিলে কোনটিতে হাত বেশি পুড়বে?
উত্তরঃ স্টিমের লীন তাপ 537 ক্যালরি/গ্রাম । ফলে 100°C উষ্ণতার প্রতি গ্রাম ফুটন্ত জলে যে পরিমাণ তাপ থাকে, তার তুলনায় 100°C উষ্ণতার প্রতি গ্রাম স্টিমে 537 ক্যালরি তাপ বেশি থাকে । এই কারণে 100°C উষ্ণতার ফুটন্ত জলের চেয়ে 100°C উষ্ণতার স্টিমে হাত দিলে হাত বেশি পুড়ে যায় ।
৫২। বরফের টুকরো মধ্যে গর্ত করে জল রাখলে গর্তের জল বরফে পরিণত হবে কি? ব্যাখ্যা করো ।
উত্তরঃ বরফে গর্ত করে জল রাখলে ওই জল বরফে পরিণত হবে না । কারণ জলের তাপমাত্রা 0°C এর বেশি থাকলে বরফ ওই জল থেকে লীন তাপ সংগ্রহ করে গলতে থাকবে এবং জল তাপ বর্জন করে শীতল হতে থাকবে । উভয়ের তাপমাত্রা 0°C -এ পৌঁছালে তাপের আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যাবে বরফ গলাও থেমে যাবে । এখন 0°C তাপমাত্রার জলকে বরফে পরিণত করতে হলে প্রতি গ্রাম জল থেকে 80 ক্যালরি তাপ নিষ্কাশন করতে হবে । কিন্তু গর্তের জল এবং অবশিষ্ট বরফের তাপমাত্রা পরস্পর সমান থাকায় বরফ 0°C উষ্ণতার জল থেকে আর তাপ শোষণ করতে পারবে না । ফলে গর্তের জল বরফে পরিণত হবে না ।
দৈনন্দিন জীবনে কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা–
বাষ্পায়নের ফলে শৈত্যের উৎপত্তি হয় কেন?
উত্তরঃ কোন তরল যখন বাষ্পে পরিণত হয়, বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ তরল ও তরল সংলগ্ন পাত্র থেকে সংগ্রহ করে । ফলে সেই তরল ও তরল সংগ্রহ পাত্রের তাপমাত্রা কমতে থাকে । তাই শৈত্যের উৎপত্তি হয় ।
১। মাটির কলসির জল ধাতব বা কাচপাত্রে রাখা জলের চেয়ে বেশি ঠান্ডা হয় । কারণ- মাটির কলসির গায়ে অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে । এদের ভিতর দিয়ে কলসির জল চুইয়ে বাইরে আসে এবং বাষ্পীভূত হয় । এই বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ প্রধানত কলসি ও কলসির জল থেকে সরবরাহ হয় । ফলে কলসির জল ঠান্ডা হয় । কিন্তু ধাতুর বা কাচের পাত্রের গায়ে এরকম ছিদ্র নেই । তাই ঐসব পাত্রের জল বাষ্পীভূত হতে পারে না । সেই জন্য কাজ বা ধাতব পাত্রের জল মাটির পাত্রে রাখা জলের মত ঠান্ডা হয় না ।
২। শরীরের কোন অংশে কয়েক ফোঁটা ইথার বা স্পিরিট ফেললে সেই স্থান খুব ঠান্ডা বোধ হয় । কারণ- ইথার ও স্পিরিট উদ্বায়ী তরল । ফলে ওই তরলগুলি সাধারণ বায়ুমন্ডলের উষ্ণতায় দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয় এবং বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপের বেশিরভাগ অংশ দেহের তরল সংলগ্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে । ফলে দেহের ওই অংশ তাপ বর্জন করে ঠান্ডা হয় ।
৩। ঘর্মাক্ত দেহে হাওয়া দিলে শীতল হয় । কারণ- ঘর্মাক্ত দেহে হাওয়া দিলে বায়ু প্রবাহের বেগ বাড়ে । ফলে দেহের ঘাম দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয় । এই বাষ্পায়নের সময় ঘাম দেহ থেকে প্রয়োজনীয় লীন তাপ সংগ্রহ করে ফলে দেহ শীতল হয়। উত্তপ্ত দেহ ঠান্ডা হওয়ায় আমরা আরাম বোধ করি ।
৪। ভিজে জামা-কাপড় গায়ে শুকলে সর্দি লাগার সম্ভাবনা থাকে । কারণ- ভিজে জামা-কাপড় থেকে জল বাষ্পে পরিণত হয় এবং এই বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ শরীর থেকে সংগ্রহ করে । ফলে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় এবং তখন ঠান্ডা লেগে সর্দি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । এই কারণে ভিজে জামা-কাপড় গায়ে শুকানো উচিত নয় ।
৫। গরমকালে রাস্তাঘাট ও ঘরের মেঝেতে জল ছিটিয়ে দেওয়া হয় । কারণ- এই জল রাস্তাঘাট ঘরের মেঝে ও পারিপার্শ্বিক বায়ু থেকে তাপ গ্রহণ করে বাষ্পে পরিণত হয় । ফলে ওদের উষ্ণতা কমে এবং বায়ু শীতল হওয়া হওয়ায় রাস্তাঘাট ও ঘর ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুবিধা হয় ।
৬। গরমের দিনে কুকুর জিব বের করে হাঁপায় । কারণ- কুকুরের শরীর থেকে ঘাম বের হয় না । কুকুর জিব বের করে হাঁপালে জিব থেকে জল বাষ্পীভূত হয় । এই বাষ্পায়ন ঘটাতে প্রয়োজনীয় লীন তাপ কুকুরের জীব থেকে সরবরাহ হয় হলে কুকুরের শরীরের তাপ কমে এবং কুকুরটি আরম বোধ করে ।
৭। জ্বর বেশি হলে কপালে ভেজা কাপড়ের জল পটি দেওয়া হয় । কারণ- ভেজা জলপটির জল কপাল থেকে লীন তাপ সংগ্রহ করে বাষ্পে পরিণত হতে থাকে । ফলে কপাল ও কপাল সংলগ্ন দেহাংশ ঠান্ডা হয় এবং রোগী আরাম বোধ করে ।
৮। গরম দুধে ক্রমাগত ফুঁ দিয়ে দুধকে ঠান্ডা করা হয় । কারণ- গরম দুধে ক্রমাগত ফুঁ দিলে দুধের বাষ্প দুধের উপরের তলে জমতে পারেনা । ফলে গরম দুধ থেকে বাষ্পায়ন তাড়াতাড়ি হয় । এই বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ পাত্রে দুধ থেকে সরবরাহ হওয়ায় পাত্রের দুধ সহজেই ঠান্ডা হয়ে পড়ে ।
৯। তাপ প্রয়োগ না করে ঘরের উষ্ণতায় জলকে ফোটানোর সম্ভব কি?
উত্তরঃ একটি বদ্ধ পাত্রে ঘরের উষ্ণতায় কিছু জল রেখে ওই পাত্রের সঙ্গে একটি বায়ু নিষ্কাশন পাম্প যোগ করা হল । এবার পাত্রের বায়ু ক্রমশ নিষ্কাশন করতে থাকলে একসময় দেখা যাবে যে পাত্রের জল ফুটছে । এর কারণ হল ওই অবস্থায় জলের উপর যে চাপ থাকে সেই চাপে জলের স্ফুটনাঙ্ক ঘরে উষ্ণতার সমান হয় এবং জল ফুটতে থাকে ।
১০। শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় কেন?
উত্তরঃ শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্প কম থাকে । এই সময় শরীরের অনাবৃত নরম অংশ যেমন ঠোঁট থেকে বাতাস জলীয় বাষ্প শোষণ করে । ফলে ঠোঁট ফেটে যায় । । গ্লিসারিন অনুদ্বায়ী তরল । গ্লিসারিন বায়ু থেকে জলীয় বাষ্প শোষণ করে এবং ঠোঁট থেকে জলীয় বাষ্প বাষ্পীভূত হতে বাধা দেয় । তাই গ্লিসারিন লাগালে ঠোঁট ফাটা বন্ধ হয় ।
১১। লীন তাপ থার্মোমিটারে ধরা যায় না কেন?
উত্তরঃ যখন কোন পদার্থ লীন তাপ গ্রহণ করে কঠিন থেকে তরলে অথবা তরল থেকে বাষ্পে পরিণত হয় তখন ওই তাপশক্তি পদার্থের অণুগুলির পারস্পরিক আকর্ষণ শিথিল করতে ব্যয়িত হয় । পক্ষান্তরে তরল বা বাষ্পে এই তাপশক্তি স্থিতিশক্তি রুপে সঞ্চিত থাকে । যখন তরল কঠিনে অথবা বাষ্প তরলে অবস্থান্তর ঘটায় তখন ওই স্থিতিশক্তি পুনরায় তাপ শক্তি রূপে পদার্থ থেকে বেরিয়ে আসে । ফলে লীন তাপ থার্মোমিটারে ধরা পড়ে না ।
১২। বরফের উপর দিয়ে চাকা বিহীন স্লেজ গাড়ি চলে কি করে?
উত্তরঃ চাকা বিহীন স্লেজ গাড়িকে বরফের উপর রাখলে গাড়ির চাপে গাড়ির নিচের বরফের গলনাঙ্ক কমে যায় এবং বরফ গলে যায় । তখন স্লেজ গাড়ির নিচের বরফের উপর জলের পাতলা স্তরে সৃষ্টি হয় । ফলে গাড়ির নিচের বরফ পিছল হয়ে পড়ে এবং স্লেজ গাড়ি ওই বরফের উপর দিয়ে অতি সহজে পিছলে চলতে থাকে । একই কারণে বরফের উপর দিয়ে হাঁটতে গেলে পা পিছলে যায় ।