নিউক্লিয় বল (Nuclear force):
খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে যে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে ওই অতি ক্ষুদ্র স্থানে প্রোটনগুলি একসঙ্গে অবস্থান করে কিভাবে? ধনাত্মক আধানযুক্ত প্রোটন গুলির মধ্যে কোন তড়িৎ বল কার্যকরী হতে পারেনা হতে পারে না, কারণ সেক্ষেত্রে প্রোটন গুলি পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে এবং নিউট্রন গুলি নিস্তড়িত বলে ওদের উপর তড়িৎ বলের কোন প্রভাব থাকবে না । আবার প্রোটন গুলির মধ্যে পারস্পরিক স্থির তড়িৎ বিকর্ষণ বল নিউক্লিয়াসকে দুঃস্থিত (unstale) করে তোলে । এটি মহাকর্ষ বলও হতে পারে না, কারণ প্রোটন গুলির পারস্পরিক স্থির তড়িৎ বিকর্ষণ বলের তুলনায় ওই মহাকর্ষ বলের মান অনেক কম । নিউক্লিয়াসকে দৃঢ় সংঘবদ্ধ করে রাখার জন্য ক্রিয়াশীল বলকে অবশ্যই কুলম্বীয় বিকর্ষণ বলের ক্রিয়াকে প্রতিহত করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী আকর্ষণ বল হতে হবে ।
তাই বলা যায়, কুলম্বীয় বা মহাকর্ষ বল অপেক্ষা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির এক প্রকার বল যা কেবলমাত্র নিউক্লিয়নগুলির আন্ত:ক্রিয়ায় উদ্ভূত হয় তাকে নিউক্লিয় বল বলে ।
নিউক্লিয় বলের বৈশিষ্ট্য:
(i) নিউক্লিয় বল অত্যন্ত শক্তিশালী আকর্ষণ বল ।
(ii) নিউক্লিয় বল খুব স্বল্প পাল্লার মধ্যে ক্রিয়া করে ।
(iii) নিউক্লিয় বল আধান নিরপেক্ষ এবং স্থির তড়িৎ বল নয় । কারণ একই দূরত্বে দুটি প্রোটন বা দুটি নিউট্রন বা একটি প্রোটন ও একটি নিউট্রনের মধ্যে ক্রিয়াশীল বল অভিন্ন ।
ভরত্রুটি (Mass defect):
দেখা গেছে যে, নিউক্লিয়াসের স্থির ভর সর্বদাই এতে উপস্থিত কণা সমূহের মোট ভরের চেয়ে কম হয় । নিউক্লিয়াসের স্থির ভর ও এতে উপস্থিত নিউক্লিয়ন গুলির মোট ভরের পার্থক্যকে ভরত্রুটি বলে ।
A ভর সংখ্যা ও Z পরমাণু ক্রমাঙ্ক বিশিষ্ট একটি নিউক্লিয়াসের কথা ধরা যাক । এতে উপস্থিত প্রোটন সংখ্যা Z এবং নিউট্রন সংখ্যা (A- Z) ।
একটি প্রোটনের ভর mp ও একটি নিউট্রনের ভর mn হলে নিউক্লিয়ন গুলির মোট ভর = Zmp + (A – Z)mn
নিউক্লিয়াসের স্থির ভর M হলে,
ভরত্রুটি Δm = [Zmp + (A – Z)mn] – M
নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি (Nuclear binding energy):
পরমাণু নিউক্লিয়াস গঠনের সময় যে ভরত্রুটি হয় তা আইনস্টাইনের E = mc2 সমীকরণ অনুযায়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । উৎপন্ন এই শক্তি আকর্ষণ বল রূপে কাজ করে এবং নিউক্লিয়াসের স্থায়িত্ব ঘটায় । একে নিউক্লিয় বন্ধন শক্তি বলে ।
অন্যভাবে বলা যায় যে, সর্বনিম্ন যে পরিমাণ শক্তি কোন নিউক্লিয়াসে সরবরাহ করলে নিউক্লিয়াসের মধ্যস্থ সমস্ত নিউক্লিয়ন গুলি অর্থাৎ প্রোটন ও নিউট্রন কণাগুলির প্রত্যেকটিই সম্পূর্ণ স্বাধীন বা মুক্ত কণায় পরিণত হবে তাকে ওই নিউক্লিয়াসের বন্ধন শক্তি বলে ।
নিউক্লিয় বিভাজন (Neuclear fission):
1939 সালে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত গবেষণার সময় দুজন জার্মান বিজ্ঞানী অটোহান ও স্ট্রাসমান লক্ষ্য করেন যে, ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করলে পরমানুটি প্রায় সমভর বিশিষ্ট দুটি মৌলের পরমাণুতে ভেঙে যায় । পরীক্ষার সাহায্যে এটা বোঝা যায় যে উৎপন্ন দুটি মৌলের একটি হলো 56 পরমাণু ক্রমাঙ্ক বিশিষ্ট বেরিয়াম (Ba) এবং অপরটি হলো 36 পরমাণু ক্রমাঙ্ক বিশিষ্ট ক্রিপ্টন (Kr) । পরবর্তীকালে আরও জানা যায় যে এই ধরনের বিভাজনে প্রচুর শক্তি নির্গত হয় ।
আরও পরীক্ষার পরে বোঝা যায় যে, শুধুমাত্র ইউরেনিয়ামই নয়, আরো অনেক ভারী মৌলের (যেমন – 94Pu249, 90Th232 ইত্যাদির) নিউক্লিয়াস উপযুক্ত শক্তি সম্পন্ন কণার আঘাতে প্রায় সমভরের দুটি টুকরোতে ভেঙে যেতে পারে এবং প্রচুর শক্তি নির্গত হয় । এই ধরনের ঘটনাকে নিউক্লিয় বিভাজন বলে ।
যে বিভাজনে কোন ভারী নিউক্লিয়াস বিভাজিত হয়ে দুটি কাছাকাছি ভরের নিউক্লিয়াস উৎপন্ন হয় এবং তার সঙ্গে নিউট্রন জাতীয় কয়েকটি ক্ষুদ্র কণা এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয় তাকে নিউক্লিয় বিভাজন বলে । নিউক্লিয় বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তিকে বিভাজন শক্তি বলে ।
উদাহরণ: 92U235 + 0n1 -> 56Ba141 + 36Kr92 + 30n1 + 200 MeV

নিউক্লিয় বিভাজনে শক্তি উৎপাদন:
নিউক্লিয় বিভাজনের ফলে উৎপন্ন প্রায় সমভর বিশিষ্ট পদার্থ গুলির মোট ভর, মূল পদার্থ ও আঘাতকারী কণার সম্মিলিত ভর অপেক্ষা কম হয়; অর্থাৎ বিভাজনের ফলে বস্তুগুলির ভরের কিছু হ্রাস হয় । যে পরিমাণ ভর হ্রাস পায়, তা আইনস্টাইনের E = mc2 সমীকরণ দ্বারা শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
শৃঙ্খল বিক্রিয়া (Chain reaction):
একটি ইউরেনিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয় বিভাজনের ফলে দু-তিনটি নিউট্রন নির্গত হয় । এদের গৌণ নিউট্রন (Secondary neutrons) বলে । এই গৌণ নিউট্রনগুলি যথেষ্ট শক্তি সম্পন্ন হয় । যদি এই গৌণ নিউট্রনগুলি প্রত্যেকটি অন্যান্য ইউরিনিয়াম পরমাণুকে আঘাত করে তাদের বিভাজিত করে তাদের আরও গৌণ নিউট্রন উৎপন্ন হবে । এইভাবে নিউক্লিয় বিভাজন প্রক্রিয়া এবং আরো গৌণ নিউট্রন উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে ।
একটি নিউট্রন দ্বারা বিভাজন প্রক্রিয়া শুরু হলে নিউট্রন বৃদ্ধির সংখ্যা এবং নিউক্লিয় বিভাজনের সংখ্যা গুণোত্তর প্রগতির মত দ্রুত হারে বাড়তে থাকে । এইভাবে সমগ্র প্রক্রিয়াটি একটি শৃঙ্খলের মত স্বত:চালিত প্রক্রিয়া হয় । বিভাজনের এইরূপ প্রক্রিয়াকে শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলা হয় । কারণ একবার বিভাজন শুরু হলে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সমগ্র প্রক্রিয়াটি পরপর চলতে থাকে । এর ফলে তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম এর নমুনাটির সব কয়টি পরমাণু খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিভাজিত হয় এবং তা থেকে উদ্ভূত বিপুল পরিমাণ শক্তি বড় আকারের বিস্ফোরণ ঘটায় । পারমাণবিক বোমায় এই অনিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খল বিক্রিায়াজনিত উদ্ভূত শক্তির ফলে বিস্ফোরণ ঘটে ।

নিউক্লিয় চুল্লি (Nuclear reactor):
দেখা যায় যে, প্রতিটি নিউক্লিয় বিভাজনে গড়ে প্রায় 2.5 সংখ্যক নিউট্রন নির্গত হয় । যদি এই গৌণ নিউট্রন গুলির মধ্যে গড়ে একটি নিউট্রন নিউক্লিয় বিভাজন ঘটায় এবং বাকি নিউট্রন গুলি বিভাজন না ঘটিয়ে নষ্ট হয় তা হলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে শক্তির উৎপাদন হয় না এবং বিস্ফোরণ ঘটে না । বরং নিউক্লিয় বিভাজন ও শৃঙ্খল বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় এবং শৃঙ্খল বিক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট হারে ঘটে ।
যে যন্ত্রের সাহায্যে নিউক্লিয় বিভাজনের সৃষ্ট শৃঙ্খল বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রয়োজনমতো নির্দিষ্ট হারে ও সুনিশ্চিতভাবে নিউক্লিয় শক্তি পাওয়া যায় তাকে নিউক্লিয় চুল্লি বলে ।
নিউক্লিয় চুল্লিতে নিয়ন্ত্রিত শৃঙ্খল বিক্রিয়ার সাহায্যে নিয়ন্ত্রিতভাবে তাপশক্তি উৎপাদন করা হয় এবং এই শক্তিকে তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের কাজে লাগানো যায় ।
নিউক্লিয় চুল্লির ব্যবহার:
(i) বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন, (ii) তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ উৎপাদন, (iii) নিউট্রনের তীব্র রশ্মি উৎপাদন, (iv) বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে বিভিন্ন রকমের পদার্থের উৎপাদন ।
নিউক্লিয় দুর্ঘটনা: নিউক্লিয় চুল্লি, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এবং ল্যাবোরেটরিতে ব্যবহৃত তেজস্ক্রিয় মৌলের আইসোটোপ গুলি থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় কণার পরিবেশে ছড়িয়ে পড়াকে নিউক্লিয় দুর্ঘটনা বলে । তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে মানবদেহে সাধারণত দুই ধরনের ক্ষতি হয় – (I) প্যাথলজিক্যাল ও (II) জেনেটিক । প্যাথলজিক্যাল ক্ষ্যাতির ক্ষেত্রে দেহের যে অংশে বিকিরণ পরে সেই অংশের কোষগুলি ধ্বংস হয় ফলে লিউকোমিয়া বা ক্যান্সার হতে পারে । জেনেটিক ক্ষতি আরও মারাত্মক । এতে জনন কোষের জিনগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । ফলে এই রোগ বংশানুক্রমিক ভাবে চলতে থাকে ।
নিউক্লিয় সংযোজন (Neuclear fusion):
নিউক্লিয় বিভাজনের বিপরীত প্রক্রিয়া হল নিউক্লিয় সংযোজন । নিউক্লিয় সংযোজন প্রক্রিয়ায় দুই বা ততোধিক হালকা নিউক্লিয়াস পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী একটি নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং এর ফলে প্রচুর পরিমাণে শক্তির উদ্ভব হয় ।

দুটি ডয়েটেরিয়ামের সংযোজনের ফলে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এবং 3.2 MeV শক্তি নির্গত হয়, অথবা একটি ট্রাইটিয়াম নিউক্লিয়াস তৈরি হয় এবং 4.0 MeV শক্তি নির্গত হয় ।
1H2 + 1H2 -> 2He3 + 0n1 + 3.2 MeV
অথবা, 1H2 + 1H2 -> 1H3 + 1H1 + 4.0 MeV
আবার এই ট্রাইটিয়াম ও ডয়টেরিয়ামের সংযোজনে হিলিয়াম তৈরি হয় এবং 17.6 MeV শক্তি নির্গত হয় । অর্থাৎ
1H3 +1H2 -> 2He4 + 0n1 + 17.6 MeV
ধনাত্মক আধান বিশিষ্ট নিউক্লিয়াসগুলিকে সংযুক্ত করে নতুন নিউক্লিয়াস গঠন করার জন্য পরস্পরের কাছে আসতে হয় এবং কাছে আসার জন্য তাদের মধ্যে প্রবল ভাবে ক্রিয়াশীল কুলম্ব বিকর্ষণ বল অতিক্রম করতে হয় । তাই প্রাথমিকভাবে উচ্চশক্তি সম্পন্ন না হলে এই সংযোজন বিক্রিয়া ঘটতে পারে না । পরীক্ষার লব্ধ ফল থেকে দেখা যায় যে, প্রোটিয়াম, ডয়টেরিয়াম, ট্রাইটিয়াম ইত্যাদি গ্যাসকে 107 °C অথবা তার অধিক উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে তাদের বেশ কিছু সংখ্যক নিউক্লিয়াসের তাপশক্তির পরিমাণ এত বেশি হয় যে তারা কুলম্ব বিকর্ষণ বল অতিক্রম করে নিউক্লিয় সংযোজন ঘটাতে সক্ষম হয় । উচ্চতর উষ্ণতার দ্বারা ঘটানো এই নিউক্লিয় বিক্রিয়াকে তাই তাপ নিউক্লিয় বিক্রিয়া (Thermonuclear reaction) বলা হয় ।
নিউক্লিয় সংযোজনের শক্তি উৎপাদন:
নিউক্লিয় সংযোজন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন নিউক্লিয়াস গুলির মোট ভর প্রাথমিক নিউক্লিয়াস গুলির মোট ভোর অপেক্ষা কম হয়; অর্থাৎ সংযোজন এর ফলে মোট ভর হ্রাস পায় । যে পরিমাণ ভর হ্রাস হয় তা আইনস্টাইনের E = mc2 সমীকরণ অনুযায়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।
নিউক্লিয় সংযোজনের ফল:
সূর্য ও অন্যান্য নক্ষত্রের অভ্যন্তরে উষ্ণতা অত্যন্ত বেশি এবং এই উষ্ণতা 107 °C অথবা তারও বেশি হয় । সূর্য অন্যান্য নক্ষত্র গুলি থেকে যে প্রভূত পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় তার উৎস হলো এই উচ্চমাপের উষ্ণতায় নিউক্লিয় সংযোজন । বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে মূলত দুই ধরনের শক্তি চক্রের ফলে এই শক্তির উদ্ভব হয় ।
প্রোটন-প্রোটন চক্র:
এই সংযোজন চক্র এই হল সূর্যের শক্তির উৎস ।
সূর্যের মধ্যে কয়েকটি নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়ার ধাপের সাহায্যে এই চক্রটি সম্পন্ন হয় । প্রথমে দুটি প্রোটন সংযুক্ত হয়ে একটি ডয়টেরিয়াম নিউক্লিয়াস গঠন করে । এই ডয়টেরিয়াম আবার একটি প্রোটনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম-3 গঠন করেন নিউক্লিয়াস গঠন করে । দুটি হিলিয়াম-3 নিউক্লিয়াস সংযুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম-4 নিউক্লিয়াস এবং একইসঙ্গে আরো দুটি প্রোটন গঠন করে চক্রটি সম্পন্ন হয় ।
1H1 + 1H1 -> 1H2 + +1e0
1H2 + 1H1 -> 2H3
2He3 + 2He3 -> 2He4 + 2H1
41H1 -> 2H4 + 2+1e0
সংযোজন বিক্রিয়ার ধাপ গুলিতে নিসরাত মিশ্রিত শক্তির গণনা করলে দেখা যাবে এই সামগ্রিক চক্রে মোট প্রায় 26.7 MeV শক্তির উদ্ভব হয় । সুতরাং বলা যায় যে সূর্যের জ্বালানি হল যে হাইড্রোজেন । এই জ্বালানি পুড়িয়ে হিলিয়াম তৈরি হয় এবং তার ফলে যে শক্তি উদ্ভূত হবে তাই হল সূর্যের শক্তির উৎস ।
কার্বন-নাইট্রোজেন চক্র:
যেসব নক্ষত্রের আভ্যন্তরীণ উষ্ণতা 107 K অপেক্ষা আরো অনেক বেশি সেই নক্ষত্র গুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই কার্বন নাইট্রোজেন চক্রের ফলে শক্তির উদ্ভব হয় । এই চক্রে একটি প্রোটন একটি 12C আইসোটোপের সঙ্গে নিউক্লিয় সংযোজন এর ফলে একটি 13N আইসোটোপ গঠন করে । এই 13N হল একটি তেজস্ক্রিয় নাইট্রোজেন আইসোটোপ এবং এটি একটি পজিট্রন কণা নিঃসরণ করে 12C আইসোটোপের পরিণত হয় । এই 12C স্থায়ী । কিন্তু এটি আবার একটি প্রোটনের সঙ্গে নিউক্লিয় সংযোজনে 14N পরিণত হয় । এই 14N আরও একটি প্রোটনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে 15O গঠন করে । এই 15O তেজস্ক্রিয় অক্সিজেন আইসোটোপ, যা একটি পজিট্রন নিঃসরণ করে 15N আইসোটোপের পরিণত হয় । এই 15N প্রোটনের সঙ্গে নিউক্লিয় সংযোজনে 12C আইসোটোপে পরিণত হয় এবং এইভাবে চক্র সম্পূর্ণ হয় । এই চক্রের বিভিন্ন ধাপের সমীকরণ গুলি নিম্নরূপ:
6C12 + 1H1 -> 7N13 + γ
7N13 -> 6C13 + +1e0 + γ
6C13 + 1H1 -> 7N14 + γ
7N14 + 1H1 -> 8O15 + γ
8O15 -> 7N15 + +1e0 + γ
7N15 + 1H1 -> 6C12 + 2He4
এই চক্রের বিভিন্ন বিক্রিয়ার সামগ্রিক ফল হল চারটি প্রোটন সংযুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস গঠন করে ।
বিভিন্ন ধাপ গুলিতে উৎপন্ন শক্তি মিলে এই চক্রে মোট 26.7 MeV পরিমাণ শক্তির উদ্ভব হয় ।