ইতিহাস যেভাবে লেখা হয় সেভাবেই জানতে আমরা অভ্যস্ত। আমি পুরো ইতিহাস জানিনা তবে খুব সাধারণ বর্ণনায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরবার চেষ্টা করছি মাত্র। ভুল হলে ক্ষমাপ্রার্থী।
ছোটোবেলা থেকে সেভাবে বাইরে কোথাও কখনো ঘুরতে যায়নি, আশে পাশের মাঠ ঘাট গাছপালা জলাশয় ও তার চারপাশের সবুজের প্রতি আকর্ষণটা বরাবরই। খুব বেশি ভিরভার পছন্দ নয়। কখনো সাইকেল কখনো বা বাইক নিয়ে কাছে পিঠেই দিগন্তবিস্তৃত সবুজের খোঁজে বেরিয়ে পড়তাম। সময়টা 2011 সালের মার্চের মাঝামাঝি। বেরোলাম সম্পুর্ন এক অজানায় রাস্তায়। খুব বেশি দূরে নয়। 14 বা 15 কিমি যাবার পরই বড় বড় অট্টালিকা শেষে ভাঙা ভাঙা পিচ রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে মনটা আনন্দে ভরে উঠতে লাগলো। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। রাস্তার দুপাশে বিস্তৃত ঘন সবুজ ঘাস, ফাঁকা মাঠ গুলোতে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কোথাও বা দল বেঁধে ছেলেরা রং বে রঙের জার্সী গায়ে ফুটবল খেলছে। হঠাৎ রাস্তায় একপাল গরুর দেখা, পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতেই দেখলাম সবুজ মাঠে গরু ছাগল চরছে। গ্রাম থেকে চলে আসার পর শহরতলিতে এরকম দৃশ্য আর কখনো চোখে পড়েনি। ছোটবেলার স্মৃতি উস্কে দিলো মনে পড়ে গেলো গরু ছাগল চড়াতে নিয়ে যাওয়া আর খোঁয়াড়ের কথা। মাঠে অন্য কারোর ফসল খেয়ে নিলে গরু বা ছাগল খোঁয়ারে রেখে দিতো, কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হতো। পানিফল… পানিফল… শব্দ শুনে ফিরে এলাম বাস্তবে। রাস্তার ধারে যত্রতত্র কিছু লোক বসে পানিফল বিক্রি করছে। জানলাম কাছে পিঠের জলাশয়ে চাষ হয়। দু’একটা খেয়ে কিছুটা কিনে নিলাম। আরো একটু এগিয়ে গিয়ে ভাঙা রাস্তার পাশে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা আকাশ ও সবুজের গালিচার মাঝে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। বুক ভরে খোলা বাতাস নিচ্ছি। হঠাৎ চোখে পড়লো খোয়া দিয়ে তৈরি একটা পথ। এগিয়ে চললাম খোয়ার পথ ধরে, থামলাম এক বিশাল জলাশয়ের প্রান্তে যার অন্যপ্রান্ত চোখে পড়ে না। এটিকে ঝিল বলাই ভালো। পুরো কচুরিপানায় ঢাকা। আশে পাশে গরু ছাগল চড়ছে, অসমান উচুনিচু জায়গায় ছেলেরা ফুটবল খেলছে। দেখতে দেখতে সবুজ ঘাসের উপর বসে পড়লাম। আনন্দে আত্মহারা লাগছিলো। পানিফলগুলোর সদ ব্যবহার করতে করতে মুগ্ধ দৃষ্টিতে পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীদের আনাগোনা দেখতে লাগলাম। তারাও কেমন যেন অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমাকে দেখে দেখে চলে যাচ্ছিল। ঘন্টা খানেক সময় অতিবাহিত করে প্রথম দিনেই এক অদ্ভুত ভালোলাগা তৈরি হয়ে গেল। উঠতে উঠতে প্রায় অন্ধকার হয়ে গেল। শুনতে পেলাম শেয়ালের ডাক।
এর পর থেকে প্রায়ই ভালোলাগার সেই জায়গাটাতে যেতে লাগলাম। কিছুদিন পরে দেখলাম বসার জন্য বাঁশের তৈরি সাত আটেক মাচার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওখানে যাবার উৎসাহ আরও বেড়ে গেলো। খোয়ার সেই রাস্তা আর নেই, ঢালাই হয়ে গেছে। ঝিলের কচুরিপানা অতি দ্রুততায় পরিষ্কার করে ফেলা হলো। জল স্ফটিকের মতো চকচক করতে লাগলো। ঢালাই রাস্তাটা ঝিলের যেখানে এসে মিলেছে সেখানেও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটা মাচা। ওই মাচায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকলে পায়ের কিছুটা ডুবে থাকতো ঝিলে আর মাছগুলো এসে পায়ে একটু সুড়সুড়ি দিয়ে চলে যেত। সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে ঘন্টা দুয়েক এখানে না আসতে পারলে ভালো লাগতো না। এখানে হয়তো দর্শনীয় কিছু ছিল না, ছিল শুধু নিঃসঙ্গ একাকীত্বকে সঙ্গ দেবার প্রাকৃতিক সঙ্গী। কিন্তু হঠাৎ ছেদ পড়লো আমার ভালোলাগার ‘রাজপ্রাসাদে’ যাওয়ার। লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেলো। অনেক রাত অবধি ওখানে নাকি লোকজন থাকতো। লোকজনের কোলাহলে মাছ গুলো আর ধারে আসে না। ভিড়ের মাঝে মাচাটাও অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগলো। হঠাৎ একদিন খবরের কাগজে একটা ছবি দেখে আঁতকে উঠলাম। ওই ঝিলের কাছেই নাকি পড়েছিল মৃতদেহ। ভয়ে আর বহুদিন যাইনি।
কিন্তু মন মানছিল না। তাই আবার এক বিকেল বিকেল পৌঁছালাম। একি!! পথ ভুলে আমি কি ভুল জায়গায় চলে এলাম নাকি!! সত্যি বলতে কি চিনতেই পারছিলাম না। চারিদিক বেড়া দেওয়া হয়েছে, কত বড় বড় সব জেসিবি, ডাম্পার, লরি, ছোটবড় আরো কত কত গাড়ি। গাদা লোকজন, তাদের থাকার থাকার লম্বা লম্বা বেড়ার তৈরি প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া ঘর। চারিদিক এত উঁচু উঁচু মাটির ঢিবি যে ঝিল টাও চোখে পড়লো না। ঢালাই রাস্তাটাও উধাও। মাথাটা কেমন যেন বনবন করে ঘুরতে লাগলো। রাগে কাঁপতে লাগলো সারা শরীর। একটু স্বাভাবিক হওয়ার পর মনে হলো যাই একবার যদি শেষ দেখা দেখতে পাই, ভালোলাগা ও ভালবাসাকে একসাথে চিরবিদায় জানিয়ে আসবো। অনেক অনুনয় বিনয় করে, হাতজোড় করে ঢুকতে পারলাম। চারদিক কাদা, কাদা পেরিয়ে পেরিয়ে যতই এগোনোর চেষ্টা করছি ততই মাটির ঢিবি উঁচু হয়ে উঠছে। ঝিলের ধার অবধি পৌঁছাতেই পারলাম না। খুঁজে পেলাম না সেই মাচার চিহ্নমাত্র। চোখদুটো ছলছল করে উঠলো। বাড়ি ফিরলাম। মনটা সেখানেই পরে রইলো। তারপরও বহুবার গেছি, দেখেছি বিভিন্ন কার্যকলাপ, কিন্তু সেই ভালো লাগা আর ছিল না।
কি হবে বা কি হতে চলেছে জানার আগ্রহ ছিল। তাই বার বার ছুটে গেছি। আলাপ জমিয়েছি সুদূর সুন্দরবন থেকে কাজ করতে আসা লোকেদের সাথে। এখানে কি হবে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলতো “কি জানি বাবু, আমাদের যেইটুকু কাজ করতে বলে সেটুকু, এর বাইরে কিছু জানিনে বাবু।” বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বসানো হবে। তাই যে গাছ যে মাটিতে ভালো হয় সেই জায়গার মাটি এনে জমিয়ে জমিয়ে রাখা হচ্ছে, কোথাও জমি তৈরি হচ্ছে চাষের, কোথাও হচ্ছে কংক্রিটের ঢালাই। তখনও কিছুই বুঝতে পারিনি। তারপর থেকে আমার যাওয়াতেও কেমন যেন ভাটা পড়লো। ঝড়ের গতিতে কাজ এগোতে থাকলো। তৈরি হয়ে গেল কলকাতা তথা ভারতের বৃহত্তম ইকো পার্ক… প্রকৃতি তীর্থ।
★★★ঘটনাক্রম: 2011 সালের মার্চের থেকে 2012 সালের আগস্ট মাস অবধি। প্রথমে খোয়া ও পরের ঢালাইয়ের রাস্তাটা ছিল এখনকার ইকো পার্কের 2 নং গেট দিয়ে ঢুকলে, যে রাস্তাটা ধরে ঝিলের সামনে যাওয়া যায় সেই জায়গায়। জলের উপরের মাচাটা আজ ‘ক্যাফে একান্তে’র তলায় চাপা পড়ে একান্তেই আছে। পানিফল, বাদাম, চানাচুর বিক্রির জায়গায় মেট্রো স্টেশন ও ঝাঁ চকচকে বিভিন্ন গাড়ির শোরুম। পরে বিভিন্ন তথ্য থেকে জেনেছি যে, 2011 সালের জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই পার্কটি করার পরিকল্পনা করেন ও উদ্যোগ নেন। এরপর পশ্চিমবঙ্গ হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (HIDCO) ও অন্যান্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে এই পার্ক তৈরির কাজ চলে। 2012 সালের 29শে ডিসেম্বর ইকো পার্ক উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। জনগনের জন্য পার্কটি খুলে দেওয়া হয় 2013 সালের পয়লা জানুয়ারী। সেই দিনের প্রকৃতি তীর্থ তার প্রাকৃতিকতা 2015 সালের শেষ অবধি বহন করেছে। মিউজিক্যাল ফাউন্টেন 2015 তে ও লেজার শো সম্ভবত 2016-17 এর মধ্যে। 2016 থেকে এসেছে কৃত্রিম ও আধুনিকতার প্রাচুর্য।পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের সবকটির ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি হয়েছে সম্ভবত 2018 সালে। এবং এখনও পার্কটির আপগ্রেডেশন চলছে। যেখানে কিছুই দেখার ছিল না আজ তা কলকাতার সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান। প্রকৃতি তীর্থ নাম হলেও প্রাকৃতিক ব্যাপার ছাপিয়ে আজ সব কিছুতেই যেনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া।।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখানোর থেকে উপভোগ করতেই ভালো লাগতো। কিন্তু সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছি। একেবারে প্রথমদিকের কোনো ছবি আমার কাছে নেই, কিন্তু পরের দিকের বিভিন্ন সময়ের কিছু টুকরো ছবি আছে। যতটুকু আমার জানা ও দেখা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম মাত্র।।
©ভিক্টর মল্লিক





























Register and take part in the drawing. Nice Blog
Thank you , For more article please visit https://crystalheartco.com/
ResumeHead is a resume writing company with certified experts in various fields and industries. Whether you’re pursuing a new job, promotion, or career change, we can help you create a standout resume. [url=https://resumehead.com/]resume writing[/url]