স্থির তড়িৎ বল ও আধানের ধারণা (Concept of Eletrostatic force and Charge)
প্রথমেই কয়েকটি ঘটনা আমরা দেখব । এগুলো তোমরা বাড়িতেও হাতে-কলমে করে দেখতে পারো ।
- চিরুনি দিয়ে শুকনো চুল আঁচড়ানোর পরে চিরুনিটিকে কয়েকটি কাগজের টুকরোর খুব কাছে আনলে দেখা যাবে যে কাগজের টুকরো গুলো চিরুনির গায়ে আটকে যায় । যদিও কিছুক্ষণ পর চিরুনি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে অর্থাৎ কাগজের টুকরো আর লেগে থাকবে না । অথচ চুল আঁচড়ানোর আগে ওই চিরুনিটি কাগজের টুকরোগুলোকে মোটেই আকর্ষণ করে না ।
- একটি ধাতব ছুরি বা ব্লেড থার্মোকলের টুকরোকে সাধারণ অবস্থায় আকর্ষণ করে না । কিন্তু ওই ধাতব ছুরি বা ব্লেড দিয়ে থার্মকল কাটার সময়, থার্মোকলের ছোট ছোট টুকরোগুলো ছুরি বা ব্লেডের গায়ে আটকে যায় । জোরে জোরে ঝাঁকুনি দিলেও সহজে তা ছাড়ানো যায় না । যদিও ঘটনাটি ক্ষণস্থায়ী ।
- শীতকালে একটি ফোলানো বেলুনকে তোমার সোয়েটারের ভালো করে ঘষে ছেড়ে দিলে দেখা যাবে যে সেটি সোয়েটারের সঙ্গে আটকে আছে, পড়ে যাচ্ছে না । অথচ এই বেলুনটিকে সোয়েটারে না ঘষে শুধু স্পর্শ করে রাখলে সেটি তোমার সোয়েটারে আটকে থাকে না, পড়ে যায় ।
- দুটি বেলুনকে সুতো দিয়ে ঝুলিয়ে উল বা পশমে ঘষে কাছাকাছি আনলে দেখা যাবে বেলুন দুটি দূরে সরে চলে যাচ্ছে ।
উপরের এই ঘটনাগুলো থেকে আমরা কি বুঝতে বা ব্যাখ্যা করতে পারি সেটা দেখা যাক ।
উপরের প্রত্যেকটি উদাহরণের ক্ষেত্রে সাধারণ ব্যাপার হলো যে একটা বস্তুকে আরেকটি বস্তুর সঙ্গে ঘষতে হয়েছে বা ঘর্ষণ করতে হয়েছে । ঘর্ষণের ফলে ওই জিনিসগুলোর মধ্যে এমন একটি পরিবর্তন ঘটেছে, যার ফলে ওই বস্তুগুলো অন্য কোন বস্তুকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ ক্ষমতা অর্জন করেছে । ঘর্ষণের ফলে কোন বস্তুর মধ্যে এমন পরিবর্তন ঘটলে বলা হয় ওই বস্তুতে তড়িৎ আধানের সৃষ্টি হয়েছে ।
ঘর্ষণের ফলে কোন বস্তুতে সৃষ্টি হওয়া এই ধরনের তড়িৎকে বলে ঘর্ষণজাত তড়িৎ । ঘর্ষণের ফলে বস্তুতে তৈরি হওয়া ওই অবস্থাকে তড়িতাহিত (electrically charged) বা তড়িৎ গ্রস্ত (electrified) বা আহিত (charged) অবস্থা বলে ।
এইভাবে ঘর্ষণের ফলে যে তড়িৎ উৎপন্ন হয় সেই তড়িৎ উৎপত্তি স্থলে সীমাবদ্ধ থাকে । তাই একে স্থির তড়িৎ বলা হয় ।
এই স্থির তড়িতের ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বল কাজ করে ।
আধানের মৌলিক সূত্র: সমাধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীত আধান পরস্পরকে আকর্ষণ করে ।
অনাহিত বস্তু অর্থাৎ যার মধ্যে আধার নেই, এরকম বস্তুকে উভয় প্রকার আধানই সর্বদা আকর্ষণ করে ।
উভয় প্রকারের সমপরিমাণ আদান একে অপরের ক্রিয়াকে প্রতিমিত করে । কাজেই আধান শুধু যে ভিন্ন প্রকারের তাই নয়, আধানের প্রকৃতিও পরস্পরের বিপরীত । দুই প্রকার আধানের একটি কে ধনাত্মক আধান (positive charge) এবং অপরটিকে ঋণাত্মক আধান (negetive charge) বলা হয় ।
ঘর্ষণের ফলে তড়িদাহিতকরণের ইলেকট্রনীয় তত্ত্ব (Eletronic theory of electrification):
এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা করার আগে পরমাণুর গঠন সম্পর্কে তোমাদের সম্যক ধারণা থাকতে হবে । নিচের লিংকে ক্লিক করে পরমাণুর গঠন সম্বন্ধে ধারণা পেতে পারবে ।
ইলেকট্রনীয় তত্ত্ব অনুসারে ঘর্ষণের দ্বারা তড়িদাহিতকরণ ঘর্ষিত এবং ঘর্ষণকারী বস্তু দুটোর মধ্যে ইলেকট্রন বিনিময়ের জন্য হয় । সাধারণভাবে নিউক্লিয়াসের নিকটবর্তী কক্ষপথ অপেক্ষা দূরবর্তী কক্ষপথে পরিক্রমণরত ইলেকট্রন গুলির নিউক্লিয়াসের সঙ্গে বন্ধন অপেক্ষাকৃত কম দৃঢ় হয় । নিউক্লিয়াস থেকে অধিকতর দূরত্বের জন্যই এটা হয় । কাজেই দূরতম কক্ষপথের এক বা একাধিক ইলেকট্রন কে পরমাণু থেকে বিচ্ছিন্ন করা অপেক্ষাকৃত সহজ ।
বিভিন্ন পদার্থের পরমাণু ওদের দূরতম কক্ষপথের ইলেকট্রন গুলিকে ভিন্ন ভিন্ন মানের আকর্ষণ বল দিয়ে আবদ্ধ করে রাখে । কাজেই দুটি বস্তুকে পরস্পরের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আনলে সাধারণত যে পদার্থে নিউক্লিয়াস ও দূরতম কক্ষস্থিত ইলেকট্রনের বন্ধন অপেক্ষাকৃত শিথিল, সেই পদার্থ থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন অপর পদার্থের স্থানান্তরিত হয় । ঘর্ষণ দ্বারা আহিত করনের সময় এই ঘটনা ঘটে । যে বস্তুটি ইলেকট্রন লাভ করে সেটি ঋণাত্মকভাবে আহত হয়, অপরপক্ষে যে বস্তু ইলেকট্রন হারায় তা ধনাত্মকভাবে আহিত হয় । অর্থাৎ ঋণাত্মক তড়িদাহিত বস্তুতে ইলেকট্রনের আধিক্য এবং ধনাত্মক তড়িদাহিত বস্তুতে ইলেকট্রনের ঘাটতি থাকে । এখানে অবশ্যই মনে রাখা দরকার কোন পরমানু সাধারণ বা স্বাভাবিক অবস্থায় প্রোটন গ্রহণ বা বর্জন করতে পারে না । কাজেই প্রোটন গ্রহণ বা বর্জন দিয়ে তরিদাহিতকরণের ব্যাখ্যা করা যেতে পারে না ।
ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধান (Positive and Negetive Charge):

একটি সহজ পরীক্ষার সাহায্যে আমরা দেখব ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধান কিভাবে উৎপন্ন হয় ।
একটি এবোনাইট এর দন্ডকে ফ্লানেল (শক্ত সুতির কাপড়) দিয়ে ঘষে একটি সুতোয় বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হল । এবার অন্য একটি এবোনাইটের দন্ডকে ফ্লানেল দিয়ে ঘষে ঝুলন্ত এবোনাইটের দন্ডের কাছে নিয়ে গেলে সেটি দূরে সরে যায় অর্থাৎ বিকর্ষণ করে । কিন্তু রেশম দিয়ে ঘষা একটি কাজ দণ্ডকে ঝুলন্ত এবনাইটের দন্ডটির কাছে নিয়ে গেলে ওটি কাচ দন্ডের দিকে এগিয়ে আসে অর্থাৎ আকর্ষণ করে । আবার রেশমে ঘষা দুটি কাচ দন্ড কাছাকাছি আনলে দেখা যাবে পরস্পরকে বিকর্ষণ করছে ।
ব্যাখ্যা: এবোনাইট দন্ডকে ফ্লানেল দিয়ে ঘষলে ফ্লানেল থেকে কিছু সংখ্যক ইলেকট্রন এবনাইটে চলে যায় । কারণ দূরতম ইলেকট্রন গুলির ক্ষেত্রে ফ্লানেলের চেয়ে এবোনাইটের আকর্ষণ বা আসক্তি বেশি । তাই ঘষার পর এবোনাইটে ইলেকট্রনের আধিক্য হয় এবং তার ঋণাত্মক ভাবে আহিত হয় । পক্ষান্তরে ফ্লানেলে ইলেকট্রনের ঘাটতি হয় বলে প্রোটনের আধানের জন্য তা সমপরিমাণে ধনাত্মকভাবে আহত হয় । আবার কাচের দণ্ডকে রেশমে ঘষলে রেশমের ইলেকট্রন আসক্তি বেশি বলে তা কাচ থেকে কিছু ইলেকট্রন গ্রহণ করে ফলে কাচদন্ড ধনাত্মকভাবে আহিত হয় এবং রেশম সমপরিমাণে ঋণাত্মকভাবে আহিত হয় । পরের এই পরীক্ষা থেকে আমরা বলতে পারি যে, ঘর্ষণ দ্বারা সমপরিমাণ বিপরীতধর্মী আধান উৎপন্ন হয় ।
স্থির তড়িৎ শ্রেণী (Electrostatic series):
ক্রমবর্ধমান ইলেকট্রন আসক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন পদার্থের একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল । এই তালিকায় যে-কোন একটি পদার্থকে ওর পরবর্তী যে-কোনো একটি পদার্থ দিয়ে ঘষলে, প্রথম পদার্থে ধনাত্মক ও দ্বিতীয় পদার্থের ঋণাত্মক আধানের উদ্ভব হবে । এই তালিকাকে স্থির তড়িৎ শ্রেণী (Electrostatic series) বলে ।
1. পশম 2. ফ্লানেল 3. গালা 4. কাচ 5. কাগজ 6. রেশম 7. কাঠ 8. ধাতু 9. ইন্ডিয়া রবার 10. গন্ধক 11. এবোনাইট 12. গাটাপারচা
তড়িদাবেশ (Eletrostatic Induction): একটি আহিত বস্তুকে একটি অনাহিত বস্তুর কাছে আনলে ওই আহিত বস্তু অনাহিত বস্তুকে কিভাবে আকর্ষণ করে তা তড়িদাবেশ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায । এক্ষেত্রে ওই আহিত বস্তুর আধানের আকর্ষণে ও বিকর্ষণে অনাহিত বস্তুর ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধান পৃথক হয়ে যায় । ফলে আহিত বস্তু সাপেক্ষে অনাহিত বস্তুর নিকটপ্রান্ত বিপরীত আধানগ্রস্ত এবং দূরপ্রান্ত সম আধানগ্রস্ত হয় । আহিত বস্তুটিকে সরিয়ে নিলেই অনাহিত বস্তুটি ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আধান সমভাবে বন্টিত হয়ে বস্তুটি আবার নিস্তড়িৎ হয়ে যায় ।

প্রত্যক্ষ সংযোগ ছাড়াই কেবলমাত্র একটি আহিত বস্তুকে কাছে এনে ওর প্রভাবে কোন বস্তুকে আহিত করনের এই সাময়িক প্রক্রিয়াকে তড়িদাবেশ বলে । যে আধানের প্রভাবে আবেশ সৃষ্টি হয় তাকে আবেশী আধান (Inducing Charge) এবং আবেশের ফলে উদ্ভূত উভয় প্রকার আধানকে আবিষ্ট আধান (Induced Charge) বলে ।
আবেশের দ্বারা আহিত বস্তুতে আবেশী আধানের নিকটপ্রান্তে বিপরীত আধান এবং দূরপ্রান্তে সম আধান আবিষ্ট হয় । অন্তরক অপেক্ষা পরিবাহীতে তড়িদাবেশ প্রক্রিয়া বেশি কার্যকর হয় ।
আকর্ষণের পূর্বে আবেশ হয় (Induction precedes attraction):
কোন আহিত বস্তুকে একটি অনাহিত বস্তুর কাছে আনলে অনাহিত বস্তুটির নিকট প্রান্তে বিপরীত আধান ও দূর প্রান্তে সমা আধান আবিষ্ট হয় । আবেশী আধান থেকে নিকটপ্রান্তে আবিষ্ট বিপরীত আধানের দূরত্ব দূরপ্রান্তে আবিষ্ট সম আধানের দূরত্বের চেয়ে কম হয় । ফলে বিপরীত আধান দুটির মধ্যে ক্রিয়ারত আকর্ষণ বল সমা আধান দুটির মধ্যে ক্রিয়ারত বিকর্ষণ বলের চেয়ে বেশি হয় । তাই সামগ্রিকভাবে অনাহিত বস্তুটি আহিত বস্তুর দিকে আকৃষ্ট হয় । অতএব, আমরা বলতে পারি আকর্ষণের পূর্বে সর্বদা আবেশ হয় ।
আকর্ষণ অপেক্ষা বিকর্ষণই তড়িৎগ্রস্থতার নিশ্চিততর প্রমাণ (Repulsion is the surer test of electrification than
attraction):
কোন বস্তু তড়িৎগ্রস্থ কিনা
তা পরীক্ষা করতে অপর একটি
আহিত বস্তুর কাছে আনতে
হয় । যদি
পরস্পরকে আকর্ষণ করে পরীক্ষাধীন
বস্তুটি তড়িৎ গ্রস্ত কিনা
তা সম্পর্কে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না ।
কারণ বিপরীতধর্মী আধানে আহিত দুটি
বস্তু যেমন পরস্পরকে আকর্ষণ
করে তেমনি একটি আহিত
বস্তু অপর একটি অনাহিত
বস্তুকে আকর্ষণ করতে পারে
। কিন্তু পরীক্ষা
দিন বস্তু এবং আহিত
বস্তুটি যদি পরস্পরকে বিকর্ষণ
করে তবে আমরা নিশ্চিত
রূপে সিদ্ধান্ত করতে পারি যে,
পরীক্ষাধীন বস্তুটি তড়িৎগ্রস্ত এবং ওর আধান
আহিত বস্তুটির আধানের সমধর্মী ।
কাজেই আকর্ষণ অপেক্ষা বিকর্ষণই
তড়িৎগ্রস্থতার নিশ্চিততর প্রমাণ ।
কুলম্বের সূত্র (Coulomb’s law):
আমরা জানি, দুটি সমাধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীত আধান পরস্পরকে আকর্ষণ করে । কিন্তু এর থেকে আধান গুলির পারস্পরিক বল সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা করা যায় না । ফরাসি বিজ্ঞানী চার্লস কুলম্ব (Charles Coulomb) পরীক্ষালব্ধ তথ্য থেকে দুটি আহিত বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের সমীকরণ প্রতিষ্ঠা করেন । তাঁর নাম অনুসারে একেক কুলম্বের সূত্র বলা হয় । এই সূত্র কেবলমাত্র বিন্দু আধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । অর্থাৎ যেসব তরিদাহিত বস্তুর আকার ওদের অন্তর্বর্তী দূরত্বের তুলনায় নগণ্য কেবলমাত্র সেসব ক্ষেত্রেই এই সূত্র প্রয়োগ করা যায় ।
সূত্র: দুটি বিন্দু আধানের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান আধান দুটির মানের গুণফলের সমানুপাতিক এবং ওদের দূরত্ব মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক । এই বল আধান দুটির সংযোজী সরলরেখা বরাবর ক্রিয়া করে এবং এর মান অন্তর্বর্তী মাধ্যমের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ।
ধরা যাক, দুটি বিন্দু আধান q1 এবং q2 পরস্পর থেকে r দূরত্বে অবস্থিত । কুলম্বের সূত্র অনুসারে উভয় আধানের মধ্যে ক্রিয়াশীল বলের মান F হলে কুলম্বের সূত্র অনুসারে,
F α q1q2 এবং F α 1/r2
F α q1q2/r2
F = k. q1q2/r2
এখানে k হলো একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক এবং একে স্থির তড়িৎ বল ধ্রুবক বা কুলম্বের ধ্রুবক বলা হয় । এর মান আধান দুটি যে মাধ্যমে অবস্থিত তার প্রকৃতির উপর এবং ব্যবহৃত একক পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে । আধান দুটির গুণফল q1q2 ধনাত্মক হলে F বিকর্ষণ বল হয়, q1q2 ঋণাত্মক হলে F আকর্ষণ বল হয় ।
কুলম্বের সূত্রে F ও r এর একক আমাদের জানা আছে । এখন q ও k -এর একক নির্ণয় করতে হবে ।
C.G.S. পদ্ধতিতে কুলম্বের সূত্রের গাণিতিক রূপ এবং আধানের একক:
এই পদ্ধতিতে k = 1/K ধরা হয় । K অপর একটি ধ্রুবক এবং একে মাধ্যমের তড়িৎ ভেদ্যতা (Permitivity) বলে । সুতরাং এই পদ্ধতিতে কুলম্বের সূত্রের গাণিতিক রূপ হবে q1q2/r2
K = q1q2/Fr2
অর্থাৎ তড়িৎ ভেদ্যতা K -এর মাত্রা হল আধান2/বল X দৈর্ঘ্য2
অর্থাৎ, K -এর একক হল e.s.u.2/dyne cm2 ।
এই পদ্ধতিতে শূন্যস্থানে বা বায়ুতে K = 1 ধরা হয় ।
এক্ষেত্রে কুলম্বের সূত্রটি হয় F = q1q2/r2
C.G.S. পদ্ধতিতে একক আধান:
দুটি সমপরিমাণ বিন্দু আধান কে শূন্যস্থানে বা বায়ুতে এক সেমি ব্যবধানে রাখলে যদি ওরা পরস্পরের উপর এক ডাইন বল প্রয়োগ করে তবে প্রতিটি বিন্দু আধান কে সি জি এস পদ্ধতিতে একক আধান বলা হয় ।
ওপরের সমীকরণে, F = 1, r = 1, q1 = q2 = q ধরা হলে, পাওয়া যায় q2 = 1 অর্থাৎ, q = 1 ।
এই একক আধানকে C.G.S. পদ্ধতিতে আধানের স্থির তড়িত একক (electrostatic Unit বা সংক্ষেপে e.s.u.) বলে । এই এককের অপর নাম স্ট্যাট কুলম্ব (stat Coulomb বা সংক্ষেপে stat C) ।
C.G.S. পদ্ধতিতে আধানের আরও একটি একক আছে একে আধানের তড়িৎচুম্বকীয় (electromagnetic unit বা সংক্ষেপে e.m.u.) একক বলে ।
1 e.m.u = 3 X 1010 e.s.u.
S.I. পদ্ধতিতে কুলম্বের সূত্রের গাণিতিক রূপ এবং আধানের একক:
S.I. পদ্ধতিতে পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে আধান (q) কে কুলম্ব (C), বল (F) কে নিউটন (N) এবং দূরত্ব (r) কে মিটার (m) এককে প্রকাশ করলে শূন্য মাধ্যমের k = 9X109 N m2/C ধরা হয় । কারণ এতে স্থির তড়িৎ বিজ্ঞানে কুলম্বের সূত্রের চেয়েও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত সমীকরণ গুলি সরলতর রূপ পায় ।
S.I. পদ্ধতিতে একক আধান:
এই পদ্ধতিতে আধানের একক কুলম্ব (Coulomb বা সংক্ষেপে C) । কুলম্বের সংজ্ঞা কুলম্বের সূত্র থেকে পাওয়া যায় না- S.I. পদ্ধতিতে তড়িৎ প্রবাহের একক থেকে আধানের এককের সংজ্ঞা দেওয়া হয় । তড়িৎ প্রবাহের একক অ্যাম্পিয়ার (ampere) -এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে,
1C = 1 ampere second
অর্থাৎ, কোন পরিবাহী তারের মধ্য দিয়ে এক অ্যাম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহ চললে যে পরিমাণ আধান এক সেকেন্ডে তারটির যে কোন প্রস্থচ্ছেদকে অতিক্রম করে তাকে এক কুলম্ব বলা হয় ।
আধানের বিভিন্ন এককের মধ্যে সম্পর্ক:
1 C = 3X109 e.s.u.
1 e.m.u. = 3X1010 e.s.u. = 10 C
তড়িৎ বলের প্রভাবে গতি:
আমরা জানি যে বিপরীতধর্মী তড়িৎ আধান পরস্পরকে আকর্ষণ করে ও সমধর্মী তড়িৎ আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে । আবার নিউটনের সূত্র থেকে আমরা জানি যে বলের প্রভাবে বেগের পরিবর্তন হয়, ফলে ত্বরণ সৃষ্টি হয় । বল যেদিকে ক্রিয়া করে বেগ সেই দিকেই পরিবর্তিত হয় অর্থাৎ বলের দিকেই ত্বরণ সৃষ্টি হয় । তড়িৎ আকর্ষণ বলের প্রভাবে পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন গুলি পরমাণুর কেন্দ্রে থাকা নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘুরতে থাকে ।

কিভাবে?
পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে ধনাত্মক তড়িৎযুক্ত নিউক্লিয়াস । অপরদিকে ইলেকট্রন হলো ঋণাত্মক তড়িৎ যুক্ত কণা । ফলে নিউক্লিয়াস ও ইলেকট্রনের মধ্যে সর্বদা তড়িৎ আকর্ষণ বল ক্রিয়া করে । এই তড়িৎ আকর্ষণ বল এর প্রভাবে ইলেকট্রনের বেগের অভিমুখ ক্রমাগত বেঁকে যায় । ইলেকট্রনের চলন গতির সঙ্গে এই আকর্ষণ বলের অভিমুখ লম্বভাবে হওয়ায় ইলেকট্রন নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ক্রমাগত ঘুরতে থাকে ।