বোর – এর পরমাণু মডেল (Bohr’s Atomic Model):
নীলস বোর (Niels Bohr) কোয়ান্টাম তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটির কিছু সংশোধন করেন। বোর সনাতন তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম তত্ত্বের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে তার পরমাণু মডেল উপস্থাপন করেন। বোরের পরমাণু মডেলটি ম্যাক্সপ্লাঙ্ক ও আইনস্টাইনের বিকিরণ সম্পর্কিত কোয়ান্টাম তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত।
বোর পরমাণু মডেলের স্বীকার্যগুলো (Bohr’s theory) হলো —
- প্রথম স্বীকার্য:
পরমাণুস্থ ইলেকট্রনসমূহ যে কোনো ব্যাসার্ধের কক্ষপথে নিউক্লিয়াসের চারদিকে পরিভ্রমণ করতে পারে না। পরমাণুতে ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে কতগুলি অনুমোদিত বৃত্তাকার কক্ষপথে পরিভ্রমন করবে। প্রতিটি কক্ষপথ গুলো নির্দিষ্ট শক্তির হয়ে থাকে। ইলেকট্রন যতক্ষণ একটি স্থির কক্ষপথে অবস্থান করে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করবে না।
এই কক্ষপথ গুলোকে শক্তিস্তর বা স্থির কক্ষপথ বা অরবিট (Stationary or Stable orbit) বা প্রধান শক্তিস্তর বলে। শক্তিস্তরগুলোকে ’n’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
n = 1 হলে, প্রধান শক্তিস্তর = K
n = 2 হলে, প্রধান শক্তিস্তর = L
n = 3 হলে, প্রধান শক্তিস্তর = M
n = 4 হলে, প্রধান শক্তিস্তর = N
…..
- দ্বিতীয় স্বীকার্য:
নিউক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রন গুলি শুধুমাত্র সেই কক্ষপথ গুলিতে আবর্তন করে যে কক্ষপথে ইলেকট্রনের কৌণিক ভরবেগ h/2π -এর পূর্ণ সংখ্যার গুণিতক হবে এবং ওই কক্ষপথ গুলিকে স্থির কক্ষপথ বলে।
অর্থাৎ যদি কোন অনুমোদিত স্থির কক্ষপথের ব্যাসার্ধ r, ইলেকট্রনের ভর m এবং ওই কক্ষপথে ইলেকট্রনের বেগ v হয়, তবে কৌণিক ভরবেগ mvr = nh / 2π
যেখানে,
n = প্রধান শক্তিস্তর (n -এর মান পূর্ণ সংখ্যা 1, 2, 3, 4 ইত্যাদি)
h = প্লাঙ্কের ধ্রুবক (h -এর মান 6.626×10-³⁴ Js)
π = ধ্রুবক (3.14)
- তৃতীয় স্বীকার্য:
বোর পরমাণুর মডেল অনুসারে ইলেকট্রন স্থির শক্তিস্তরে ঘূর্ণায়মান থাকার সময় কোনো শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করে না। পরমাণুকে যখন বাইরে থেকে শক্তি প্রদান করা হয় তখন নিম্ন শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলো শক্তি শোষণ করে উচ্চ শক্তিস্তরে গমন করেন। আবার যখন শক্তির উৎস সরিয়ে নেওয়া হয় তখন ইলেকট্রনগুলি যে শক্তি শোষণ করে উচ্চ শক্তিস্তরে গমন করেছিল ঠিক সমপরিমাণ শক্তি বিকিরণ করে আবার নিম্ন শক্তিস্তরে ফিরে আসে। এই বিকরিত শক্তি আমরা বর্ণালী হিসেবে দেখতে পাই।
এই শক্তি তাড়িত চৌম্বকীয় তরঙ্গ আকারে নির্গত হয়। দুটি শক্তিস্তরের মধ্যে শক্তির পার্থক্য
E₂ — E₁ = ΔE = hv.
যেখানে v(nu) = নির্গত বর্ণালীর কম্পাঙ্ক।
