রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল (Rutherford Atomic Model):
(1) প্রতিটি পরমাণুতে পজিটিভ প্রধান বিশিষ্ট একটি নিউক্লিয়াস আছে।
(2) পরমাণুর নিউক্লিয়াসের আকার সমগ্র পরমাণুর তুলনায় খুবই ছোট পরমাণুর ব্যাস যেখানে 10-8 সেন্টিমিটার সেখানে নিউক্লিয়াসের ব্যাস 10-13 থেকে 10-12 সেন্টিমিটার।
(3) পরমাণুর অধিকাংশ স্থানই ফাঁকা এবং পরমাণুর সমস্ত ভরই নিউক্লিয়াসে কেন্দ্রীভূত অবস্থায় থাকে।
(4) পরমাণু তড়িৎ নিরপেক্ষ হওয়ায় নিউক্লিয়াসের পজিটিভ তড়িৎগ্রস্থ প্রোটন সংখ্যা এবং পরমাণুর বহির্মহলের নেগেটিভ তড়িৎগ্রস্ত ইলেকট্রন সংখ্যার সমান থাকে।
(5) নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে পরমাণুর ইলেকট্রন গুলি কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে তীব্র বেগে নিউক্লিয়াসকে প্রদক্ষিণ করে।
সাধারণ নিয়ম অনুসারে এই সময় পজিটিভ তড়িৎ যুক্ত কণা প্রোটন এবং নেগেটিভ যুক্ত কণা ইলেকট্রনের মধ্যে পারস্পরিক আকর্ষণের ফলে ইলেকট্রন গুলির নিউক্লিয়াসের উপর গিয়ে আছড়ে পড়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে সেরকম ঘটে না। কারণ, নিউক্লিয়াসকে বেষ্টন করে তীব্র গতিতে ঘোরার ফলে একদিকে ইলেকট্রনগুলিতে কেন্দ্র বহির্মুখী বলের সৃষ্টি হয়। আবার অন্যদিকে বিপরীত তড়িৎ ধর্মীয় আকর্ষণ বল ইলেকট্রন গুলোকে নিউক্লিয়াসের দিকে আকর্ষণ করে। এই দুই সমান বিপরীতমুখী বলের ক্রিয়ায় ইলেকট্রন গুলো নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে অবিরাম ঘুরতে থাকে।

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের ত্রুটি (Limitations of Rutherford Atomic Model):
রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলে প্রধানত দুটি ত্রুটি দেখা যায় –
(1) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে নিউক্লিয়াসের চারিদিকে বৃত্তাকার কক্ষপথে ইলেকট্রন গুলি ঘুরছে। এই ঘূর্ণনের ফলে যে কেন্দ্রাতিক বলের সৃষ্টি হয় তা নিউক্লিয়াস দ্বারা স্থির তড়িৎ আকর্ষণ বল এর সমান ও বিপরীত। কিন্তু তড়িৎ গতিবিদ্যা অনুসারে নেগেটিভ তৈরি গ্রস্ত ইলেকট্রন গুলি পজেটিভ তড়িৎগ্রস্থ নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘুরতে থাকলে ইলেকট্রন গুলির শক্তি বিকিরণ করবে। ফলে ইলেকট্রন গুলির শক্তি ক্রমশ কমতে থাকবে। ক্রমাগত শক্তি খয়ের দরুন ইলেকট্রন গুলি নিউক্লিয়াসের দিকে এগিয়ে যাবে এবং এক সময়ে নিউক্লিয়াসের উপর গিয়ে পড়বে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে পরমানু সুস্থিত। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল পরমাণুর স্থায়িত্ব ব্যাখ্যা করতে পারে না।
(2) রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে পরমানুতে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন অবিরাম শক্তি বিকিরণ করলে পরমাণুর যে বর্ণালী পাওয়া যাবে তা নিরবিচ্ছিন্ন বর্ণালী হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে হাইড্রোজেন পরমাণুর ক্ষেত্রে রেখা বর্ণালী পাওয়া যায়। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল এই রেখা বর্ণালীর উৎপত্তি ব্যাখ্যা করতে পারে না।