Force and Motion (বল ও গতি) – I

স্থিতি গতি (Rest and Motion):

সময়ের সঙ্গে যে বস্তুর অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয় না, সেই বস্তুকে স্থির বা অচল বস্তু বলা হয়বস্তুর এই ধর্মকে স্থিতিশীলতা বা স্থিতি বলে উদাহরণ: চেয়ার, টেবিল, ঘরবাড়ি, পাহাড় প্রভৃতি স্থির বস্তু এবং এদের অবস্থা হল স্থিতি।

সময়ের সঙ্গে যে বস্তুর অবস্থানের ক্রমাগত পরিবর্তন হয় সেই বস্তুকে সচল বা গতিশীল বস্তু বলেবস্তুর এই ধর্মকে গতিশীলতা বা গতি বলে উদাহরণ চলন্ত রেল গাড়ি মোটর গাড়ি সাইকেল বিমান প্রভৃতির অবস্থা হল গতি।

কোনো বস্তুর স্থিতি বা গতি সবসময়ই আপেক্ষিক (Rest or motion of a body is always relative):

বিশ্বের কোন বস্তুই পরম স্থির বা পরম গতিশীল নয়। ঘরবাড়ি, গাছপালা ইত্যাদি যাদের আমরা স্থির বলে মনে করি প্রকৃতপক্ষে তারা স্থির নয়। কারণ পৃথিবীর সূর্যের চারিদিকে ক্রমাগত আবর্তন করছে। সুতরাং পৃথিবীপৃষ্ঠের উপরে সব বস্তুই ঘূর্ণায়মান। কাজেই পরম স্থিতি (Absolute rest) বলে কিছু নেই। যখন কোন বস্তুকে আমরা স্থির বলি তখন বুঝতে হবে যে, ওই বস্তু অন্য কোন বস্তু সাপেক্ষে স্থির, পরম স্থির নয়। যেমন ঘরবাড়ি গাছপালা ইত্যাদিকে আমরা পৃথিবীকে স্থির মনে করে পৃথিবীর সাপেক্ষে স্থির বলে মনে করি।

আবার গতি সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়। ধরা যাক, কোন গাড়ির বেগ প্রতি ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার। গাড়িটির এই বেগ বা গতি পৃথিবীর সাপেক্ষে অর্থাৎ পৃথিবীকে স্থির ধরে বলা হয়। কিন্তু পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে তাই গাড়িটির এই গতি পরম গতি (Absolute motion) নয়। প্রকৃতপক্ষে এই মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তুই গতিশীল। তাই বস্তুর পরম গতি নির্ণয় করা অসম্ভব। অতএব কোন বস্তুর স্থিতি বা গতি সবসময়ই আপেক্ষিক।

নির্দেশ বস্তু এবং নির্দেশ তন্ত্র (Reference body and reference frame):

যে কোন বস্তুর অবস্থান জানতে হলে আরেকটি বস্তুর প্রয়োজন হয়। এই দ্বিতীয় বস্তু সাপেক্ষে প্রথম বস্তুটির অবস্থান নির্দিষ্ট করা যায়; না হলে বস্তুর অবস্থান বলার কোন অর্থ হয় না। যখন আমরা বলি, কোনো বস্তু স্থির বা সচল তখন সবসময় ধরে নিতে হবে যে দ্বিতীয় কোনো বস্তু সাপেক্ষে ওই বস্তুটি স্থির বলা আছে অথবা ওর অবস্থান পরিবর্তিত হচ্ছে। এই দ্বিতীয় বস্তুকেই নির্দেশ বস্তু বলে। অনেক সময় কোন দ্বিতীয় বস্তু উল্লেখ না করে আমরা বলি যে, গাড়িটি স্থির আছে অথবা চলছে। গাড়ির গতির বর্ণনা এখানে পৃথিবীর সাপেক্ষে দেওয়া হয়েছে। এখানে পৃথিবী হলো নির্দেশ বস্তু।

কোন বস্তুর অবস্থান কিংবা গতি স্থিতির বর্ণনার জন্য অপর কোন বস্তু বা বিন্দুর সাহায্য নিতে হয়এই দ্বিতীয় বস্তুটিকে বলা হয় নির্দেশ বস্তুনির্দেশ বস্তুর সঙ্গে যুক্ত স্থানাঙ্ক সংস্থাকে (Coordinate system) বলা হয় নির্দেশ তন্ত্র

একটি বস্তুকে স্থির অথবা সচল বলা যায় কিনা তা নির্দেশ বস্তু নির্বাচনের উপর নির্ভর করে। মনে করো দুটি গাড়ি সমান বেগে পাশাপাশি একই দিকে চলছে। পৃথিবীর সাপেক্ষে গাড়ি দুটি সচল কিন্তু গাড়ি দুটির যাত্রীদের মনে হবে যার তারা একে অপরের সাপেক্ষে স্থির। ঠিক আবার যখন কোন দ্রুতগামী ট্রেন একই দিকে সচল আরেকটি ট্রেনকে অতিক্রম করে তখন দ্রুতগামী ট্রেনের যাত্রীর মনে হয় যে, দ্বিতীয় ট্রেনটি পিছনের দিকে যাচ্ছে। বাস্তবে দ্বিতীয় ট্রেনটিও সামনের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু দ্রুতগামী ট্রেনের সাপেক্ষে ওর গতি বিবেচনা করা হচ্ছে বলেই যাত্রীদের এরকম মনে হয়। একই কারণে জ্বলন্ত গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় ঘরবাড়ি, গাছপালা পিছনের দিকে যাচ্ছে বলে মনে হয়।

গতির প্রকারভেদ (Kinds of Motion):

গতি দুই প্রকার চলন গতি ও আবর্ত গতি। অন্য সব রকমের জটিল গতি এই দুই প্রকার গতির সমন্বয়ে গঠিত হয়।

চলন গতি (Translation motion): সচল বস্তুর প্রতিটি কণার গতি একই ধরনের হওয়ার জন্য যদি বিভিন্ন সময়ে ওই বস্তুর যেকোনো দুটি কণার সংযোজনই সরলরেখার অবস্থান পরস্পরের সঙ্গে সমান্তরাল থাকে তবে বস্তুর গতিকে চলন গতি বলে। চলন গতি দু ধরনের হয় সরল চলন গতি এবং বক্রচলন গতি।

সরল চলনগতি (Rectilinear motion): সরলরেখা বরাবর চলন গতিতে সরল চলন গতি বলে। যেমন অভিকর্ষের ক্রিয়ায় বস্তুর নিম্নমুখী গতি, সোজা রেললাইন ধরে ট্রেনের গতি, লিফটের গতি ইত্যাদি।

বক্র চলনগতি (Curvilinear motion):

বক্র পথ বরাবর চলন গতিকে বক্র চলন গতি বলে যেমন ঘুরন্ত নাগরদোলার চেয়ারের গতি, গতিশীল সাইকেল এর চাকার রিমের উপর অবস্থিত কণাগুলির গতি।

আবর্ত গতি (Rotational motion):

কোন বস্তু একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা অক্ষের চারিদিকে ঘুরতে থাকলে ওই বস্তুর গতিকে আবর্ত গতি বলে। আবর্ত গতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- বৃত্তীয় গতি ও ঘূর্ণন গতি।

বৃত্তীয় গতি (Circular motion): যখন কোন বস্তুখানা কোন বৃত্তাকার পথ বরাবর গতি সম্পন্ন করে তখন বস্তুর কণাটির গতিকে বলা হয় বৃত্তীয় গতি। যেমন সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর গতি।

ঘূর্ণন গতি (Spin motion): যখন কোন বিস্তৃত বস্তুর গতি এমন হয় যে, নিজের অক্ষের সাপেক্ষে বস্তুটির কোনরূপ স্থানান্তরণ হয় না, কেবলমাত্র দিক স্থিতির পরিবর্তন ঘটে, তখন ওই বস্তুর গতিকে ঘূর্ণন গতি বলে। যেমন ঘূর্ণায়মান পাখার গতি, লাটিমের গতি, পৃথিবী নিজ অক্ষের সাপেক্ষে আহ্নিক গতি।

মিশ্র গতি (Mixed motion): চলন ও ঘূর্ণনের সমন্বয়ে কোন বস্তুতে যে গতির সৃষ্টি হয়, তাকেই মিশ্র গতি বলে। সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর গতি, চলন্ত সাইকেল বা গাড়ির চাকার গতি, চলন্ত রোলারের গতি, স্ক্রু ড্রাইভারের গতি ইত্যাদি।

ঘূর্ণন ও বৃত্তীয় গতির মধ্যে পার্থক্য: ঘূর্ণন গতিতে বস্তু নিজ অক্ষের সাপেক্ষে আবর্তিত হয় কিন্তু বৃত্তীয় গতিতে বস্তুটি বাইরে থেকে অবস্থিত অক্ষের সাপেক্ষে বৃত্তাকার পথে আবর্তিত হয়।

স্কেলার রাশি (Scalar quantity): যে সব ভৌত রাশির কেবলমাত্র মান আছে কিন্তু দিব্য অভিমুখ নেই তাদের স্কেলার রাশি বলে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ক্ষেত্রফল, আয়তন, উষ্ণতা, ভর, সময় প্রভৃতি রাশির মান আছে কিন্তু অভিমুখ নেই। তাই এগুলি স্কেলার রাশি।

ভেক্টর রাশি (Vector quantity): যে সব ভৌত রাশির মান ও অভিমুখ দুটোই আছে তাদের ভেক্টর রাশি বলে। সরণ, ওজন, গতিবেগ, বল, ত্বরণ, মন্দন প্রভৃতি রাশিগুলির মান ও অভিমুখ থাকায় এরা প্রত্যেকে ভেক্টর রাশি। কোন ট্রেনের গতিবেগ ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরে বলতে বোঝায় যে, ট্রেনটির বেগের মান ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং ট্রেনটি উত্তর দিকে যাচ্ছে।

About Victor

Discovering my self...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *